করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে দেয়া লকডাউনে সমুদ্রে জাহাজ চলাচল কমে যাওয়ায় নীরবতার ‘অনন্য মুহূর্ত’ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তা নিয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
গবেষকরা নতুন এ অবস্থাকে ‘শান্ত সমুদ্রের বছর’ বলে উল্লেখ করেছেন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
গবেষক দলের অন্যতম সদস্য সেন্ট অ্যান্ড্রুস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পিটার টিয়াক এ পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘লকডাউন বিশ্বব্যাপী জাহাজ চলাচলে এমনভাবে স্থবিরতা এনে দিয়েছে, যা অন্য কোনোভাবে সম্ভবপর ছিল না।’
পুরো বিষয়টি আরও গভীরভাবে বোঝার জন্যে বিজ্ঞানীরা লকডাউনের আগে, লকডাউনের সময়কার ও লকডাউন-পরবর্তী সময়ে সমুদ্রের সাউন্ডস্কেপে (শব্দজগৎ) যে ধরনের পরিবর্তন ঘটে তার রেকর্ড রাখার পরিকল্পনা করেন।
সমুদ্রের গভীরে থাকা দুই শতাধিক মাইক্রোফোন (হাইড্রোফোন) চিহ্নিত করে সেগুলো কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেন তারা।
গবেষণার লক্ষ্য নিয়ে পিটার টিয়াক বলেন, ‘মানুষ্যসৃষ্ট শোরগোলের প্রভাবে সমুদ্রের গভীরে কী পরিবর্তন আসে তার পরিমাপ উঠে আসবে এতে। এমন শোরগোল কীভাবে সামুদ্রিক প্রাণী বিশেষত তিমির জীবন ও অন্যান্য মাছের বিচরণে পরিবর্তন এনেছে তাও প্রকাশ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউনের ফলে শহরগুলোতে মানুষের কর্মকাণ্ড ও যানবাহনের শব্দ কমে যাওয়ায় পাখির কলতান শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি আশপাশের পরিবেশে আরও বন্যপ্রাণীর বিচরণও নজরে আসছে। ঠিক তেমনি সমুদ্রের গভীরে যে ধরনের পরিবর্তন আসছে, তা ধারণের ব্যবস্থা করেছি আমরা।
‘এমন পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমাদের এই গবেষণার উদ্দেশ্য কেবল মহামারিকালীন সমুদ্রের পরিবর্তনকেই তুলে ধরা নয়; দশকের পর দশক ধরে ক্রমবর্ধমানভাবে শব্দদূষণের ফলে সামুদ্রিক প্রাণীর জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে, তাও আমরা গবেষণায় তুলে আনব।’
সামরিক বাহিনীর তৈরি শব্দের কারণে পথ হারিয়েছিল অনেক তিমি। ছবি: বিবিসি
বিশ্বব্যাপী সমুদ্রে দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনে মানুষের সরাসরি ভূমিকা রয়েছে। তবে সমুদ্রে শব্দদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার বিষয়টি এখনও মানুষের আয়ত্তে রয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব নিউ হাম্পশায়ারের ‘ওশান এক্যুইস্টিক’ (সামুদ্রিক শব্দ) বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক মিকসিস ওল্ডস বলেন, ‘আগেকার শান্ত সমুদ্রের তথ্য ও উপাত্ত আমাদের আরও গভীরভাবে শব্দদূষণের কারণ ও এর প্রতিরোধব্যবস্থা বুঝে উঠতে সহায়তা করবে।’
এমন অনেক সামুদ্রিক মাছ অক্ষত কোরালে প্রতিধ্বনিত শব্দ অনুযায়ী খুঁজে নেয় তাদের আবাসস্থল। ছবি: বিবিসি
এই গবেষক আরও বলেন, “সারা বিশ্বের ‘ওশান সাউন্ডস্কেপ’ ম্যাপ তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে আমাদের। এখানে থাকবে সমুদ্রে জাহাজ চলাচলের পথে শব্দদূষণের পরিমাণ, তিমির পরিযায়ী হওয়ার ধরন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা।”
তিনি আরও বলেন, এমন গবেষণার ফলে সমুদ্রের স্বাভাবিক প্রতিবেশ ও তার ওপর মানুষের কর্মকাণ্ডের প্রভাব উঠে আসবে। একই সঙ্গে সমুদ্রে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কী করণীয় হতে পারে, তাও উঠে আসবে।