বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান অনুযায়ী, প্রাইমেট বর্গভুক্ত প্রাণীর সবশেষ ধাপে রয়েছে মানুষ। মানুষের মগজের আকার বাড়ার কারণে বেড়েছে বুদ্ধিদীপ্ত আচরণ, প্রাণিজগতের ওপর তৈরি হয়েছে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা।
মানব মস্তিষ্কের আকার যদি পূর্বসুরীরাও পায়, তাহলে তাদের বুদ্ধিমত্তা ও আচরণে কী প্রভাব ফেলবে? অথবা আদৌ কি মানুষের আগের পর্যায়ের প্রাণীর মগজের আকার বাড়ানো সম্ভব?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন একদল বিজ্ঞানী। তাদের প্রাথমিক গবেষণায় মিলেছে বিস্ময়কর ফল।
জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অফ মলিকুলার সেল বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস এবং জাপানের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব এক্সপেরিমেন্টাল অ্যানিম্যালসের গবেষকেরা বিশেষ মানব জিন প্রবেশ করিয়েছেন এক প্রজাতির বানরে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এআরএইচজিএপি ১১বি নামের বিশেষ ওই জিন বানরের মগজের নিওকর্টেক্সের পরিমাণ অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। মানব মস্তিষ্কের প্রায় ৭৫ ভাগ জুড়ে থাকা নিওকর্টেক্স যুক্তি ও জটিল সিদ্ধান্তগুলোর নিয়ন্ত্রক। এর প্রাচুর্যের কারণেই বিবর্তনীয় ধারায় মানুষ সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীতে পরিণত হয়েছে।
গবেষণাটি চালানো হয়েছে মারমোসেট প্রজাতির বানরের ওপর। বিজ্ঞানীরা এআরএইচজিএপি ১১বি জিন প্রবেশ করিয়েছিলেন কয়েকটি বানরের ভ্রূণে। এরপর চলেছে টানা পর্যবেক্ষণ। গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল সায়েন্স-এ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গবেষণাটি কেবল পূর্বসুরীদের মধ্যে মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে সঞ্চার করার সক্ষমতাকেই প্রমাণ করেনি, একইসঙ্গে বিবর্তন তত্ত্বের শক্ত প্রমাণ হিসেবেও কাজে লাগবে।
মানুষের পূর্বসুরীর দেহে এআরএইচজিএপি ১১বি জিনের উদ্ভব ঘটেছিল এখন থেকে প্রায় ৫০ লাখ বছর আগে। এর ঠিক আগের জিনটি ছিল এআরএইচজিএপি ১১এ। প্রতিলিপি তৈরির কোনো এক পর্যায়ে সামান্য ভুল থেকেই এআরএইচজিএপি ১১এ জিনটি পরিবর্তিত হয়ে পরিণত হয় এআরএইচজিএপি ১১বি। এই জিনটিই লাখ লাখ বছর ধরে মস্তিষ্কের নিউরন উৎপাদক কোষের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর এর ফলে আকার বাড়তে থাকে মস্তিষ্কের এবং বৃহত্তর নিওকর্টেক্স নিয়ে মানুষের উদ্ভবের পথ সুগম হয়। বর্তমান মানুষের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুগঠিত রূপ পেয়েছে এআরএইচজিএপি ১১বি জিনটি।
এর আগে ইঁদুর ও গন্ধগোকুলের দেহেও এআরএইচজিএপি ১১বি জিন প্রবেশ করিয়ে মস্তিষ্কের আকার বাড়ার প্রমাণ মিলেছিল। তবে এবারই প্রথম প্রাইমেট বর্গের কোনো প্রাণীতে জিনটি প্রবেশ করিয়ে মানুষের অনুরূপ মস্তিষ্ক গঠনের প্রমাণ পেলেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণাপত্রের সহ-লেখক মিশেল হেইড বলেন, ‘মানুষে বিবর্তিত জিনটিকে আমরা মারমোসেট প্রজাতির বানরের ভ্রূণে প্রবেশ করিয়ে মানব ভ্রূণের মতোই মস্তিষ্কের আকার ও মগজের অভ্যন্তরীণ ভাঁজযুক্ত গঠন দেখতে পেয়েছি। মস্তিষ্কে নিউরনের পরিমাণও বাড়তে দেখা গেছে।’
এ ধরনের জিন গবেষণায় নৈতিকতার অনেকগুলো দিক মেনে চলতে হয় বিজ্ঞানীদের। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আর এ কারণেই জিন প্রতিস্থাপন করা বানরের ভ্রূণ গবেষণাগারে ১০০ দিন পর্যবেক্ষণের পর সেগুলো হত্যা করা হয়েছে।