যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার পাউডারমিল নেচার রিজার্ভে কান পাতলেই ভেসে আসে নানান জাতের পাখির কলতান।
স্বাভাবিকভাবেই গবেষকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় এই অভয়াশ্রম।
পাখিদের গতিবিধি আর আচরণ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন অ্যানি লিন্ডসি। পাখির পায়ে ব্যান্ড বসিয়ে আবার মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেন অ্যানি ও তার দল। এরপর চলে গতিবিধি পর্যবেক্ষণ।
২৪ সেপ্টেম্বর সহকর্মীদের নিয়ে ঠিক এই কাজটিই করছিলেন অ্যানি। তবে হঠাৎ চমকে যায় সবাই। দলের একজনের হাতে ধরা পড়া রোজ ব্রেস্টেড গ্রসব্যাকের একপাশটি মেয়ের, আর অন্য পাশের সব বৈশিষ্ট্য পুরুষের!
পুরুষ রোজ ব্রেস্টেড গ্রসব্যাকের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, বুক এবং ডানার নিচে থাকে লালচে গোলাপি রঙের আভা। তবে মেয়ে পাখির ক্ষেত্রে এই রঙটি হলুদ।
তবে অ্যানির দলের খুঁজে পাওয়া পাখিটির ডান দিকে রয়েছে পুরুষ নির্দেশসূচক গোলাপি রঙ, আর বাম পাশে হলুদ আভা।
এর মানে হলো, শরীরের একপাশে পুরুষ আর অন্যপাশে নারীর বৈশিষ্ট্য নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে গায়কি পাখিটি!
দ্বৈত লিঙ্গ (জিনানড্রমোর্ফ) ধারণ করা বেশকিছু প্রাণী রয়েছে পৃথিবীতে। কিছু পাখি, পোকামাকড়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় এমন বৈশিষ্ট্য। খোলসে আবৃত কাঁকড়া, লবস্টারও পড়ে এই দলে। তবে রোজ ব্রেস্টেড গ্রসব্যাক পাখির এমন বৈশিষ্ট্য একেবারেই বিরল।
পাখি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জন্মের সময়ের বিশেষ কোনো গণ্ডগোলই পাখিটির দ্বৈত লিঙ্গের কারণ। মা পাখিটির ডিম্বাণু একটি শুক্রাণুর মাধ্যমে নিষিক্ত হওয়ার কথা থাকলেও এক্ষেত্রে সম্ভবত দুটি শুক্রাণু কাজটি করেছে। আর তাতেই তৈরি হয় একটির পরিবর্তে দুটি নিউক্লিয়াস। বিরল এই ঘটনার ফলে নিষিক্ত ডিম একই সঙ্গে ধারণ করেছে মেয়ে ও ছেলের বৈশিষ্ট্যসূচক ক্রোমোজম।
আর সেই ডিম থেকে পৃথিবীর আলো দেখা রোজ ব্রেস্টেড গ্রসব্যাকটির এক পাশ নারীর, অন্যপাশ পুরুষের।
অ্যানি লিন্ডসির দল এখনো জানে না, দ্বৈত লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য ধারণ করা পাখিটির প্রজনন সক্ষমতা আদৌ আছে কি না। আপাতত পাখিটির পায়ে ব্যান্ড পরিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
বসন্তকাল রোজ ব্রেস্টেড গ্রসব্যাকের প্রজনন মৌসুম। সে সময়ে পাখিটির আচরণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন পাউডারমিল নেচার রিজার্ভের গবেষকেরা।