প্রযুক্তির ব্যবহারে কুমিল্লার কৃষিকাজে ব্যাপক পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। বীজতলা তৈরী, চারা রোপন, ধান কাটা, বস্তাবন্দি করা- সবই হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে। এতে একদিকে যেমন সময়ে মধ্যে কাজ শেষ করা যাচ্ছে, অন্যদিকে খরচ কমায় খুশি কৃষক।
সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজলার প্রত্যান্ত গ্রাম নবীপুরে ঘুরে দেখা যায়, সেখান জমি মাঝারি-উঁচু। বোরো, আউশ ও আমন- তিন মৌসুমেই ধানের আবাদ হয় ওই এলাকায়। ধানের চারা রোপনের সময় কষ্ট কম হলেও মাড়াইয়ের সময় বেশ পরিশ্রম করতে হয় নারীদের। পায়ে চাপা মেশিনে বা হাতে পিটিয়ে ধান সংগ্রহ করতে হয় তাদের। এতে রাত-দিন একাকার হয়ে যায় তাদের। ধানের মরসুমে রান্না, খাওয়া-দাওয়া সঠিক সময়ে করতে পারেন না কিষান-কিষানীরা। তবুও যেন তাদের কাজ শেষ হয় না।
তবে দীর্ঘকালের এই কষ্টের যন্ত্রণা বোধ হয় এবার শেষ হলো। যন্ত্রের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষকদের জীবন।
জমিত থাকা ধান মেশিন থেকে বস্তায় ভরে একবারে বাড়ি ফিরছেন কৃষকরা। নেই ধানকাটা, মাড়াইয়ের মতো কোনো ঝামেলা।
ওই গ্রামের কিষাণী সালমা বেগম ও মাজেদা খাতুন বলেন, ‘একপাশ দিয়া চোখের নিমেষে ধানকাটা শেষ, অন্য পাশে গরগর শব্দে বস্তায় ধান ঢুকছে। মনে হয় জাদুর মেশিন। চোক্ষের পলকে কাম শেষ অইয়া যায়।’
দীর্ঘদীন প্রবাসে ছিলেন নবীপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম। দেশে এসে নিজের জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। তার একটি ধান লাগানোর ট্রান্সপ্লান্টার রয়েছে। ট্রেতে চারা রোপন করেন তিনি। ট্রেতে থাকা চারা মেশিন দিয়ে লাগানোতে সময় কম লাগে। পরিশ্রম ও সময় কমে যাওয়ায় এক ফসল উঠে গেলে আরেক ফসলের জন্য জমি প্রস্তুত করার সময়ও কমেছে। এতে তিন ফসলের মাঝে সরিষার মতো অল্প সময়ে চাষ করা যায় এমন আরেকটা ফসলও করতে পারছেন তিনি।
নজরুল বলেন, ‘প্রথম দিকে যখন মেশিনে ধান লাগাতে যেতাম, অনেকে হা করে তাকিয়ে থাকতেন।’
কুমিল্লা সদর উপজলার যশপুর গ্রামের আবদুল খালেক। তার হার্ভেস্টার রয়েছ। তিনি বলেন, ‘এক একর জমির ধান কাটা, মাড়াই করতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। খরচ লাগে ৭ হাজার টাকা। অথচ ওই পরিমাণ জমির ধান শ্রমিক দিয়ে কাটালে একদিন সময় লাগে; খরচ লাগে ১৪ হাজার টাকা।’
আবদুল খালেক জানান, তার পাশের এলাকা শিমপুর, পান্ডানগর, শিমড়া, বামইল ও শ্রীপুরের দুই-তৃতীয়াংশ জমির ধান মেশিনের মাধ্যম কাটা হয়। এত কৃষকের খরচ অর্ধেক কমে গেছে; কমেছে পরিশ্রম। এর মাধ্যমে অন্তত ১৫ ভাগ ধানের অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
কষি যান্ত্রীকিকরণ প্রকল্প সূত্র জানায়, উপকূলীয় ও হাওড় এলাকার ৭০ ভাগ ও অন্যান্য এলাকায় ৫০ ভাগ ভর্তুকিতে ১২ ক্যাটাগরির কৃষি যন্ত্র বিতরণ করছে সরকার। ইতোমধ্যে দেশে প্রায় ৩৪ হাজার যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। কুমিল্লায় ৫৬টি হার্ভেস্টারসহ ৯৬টি কৃষি যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রীকিকরণ প্রকল্পের পরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘কুমিল্লায় দীর্ঘদিন কাজ করছি। এখানকার কৃষক এখন আধুনিক। জেলায় দিন দিন কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে।’
তিনি জানান, তিন বছর আগে দেশে মেশিনে ৪ ভাগ ধান কাটা হলেও বর্তমান তা ১৭ ভাগে উন্নীত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জমি যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদের আওতায় আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।