বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কার্টার সেন্টারের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। এসময় বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
শুক্রবার (৯ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ঘন্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
কার্টার সেন্টারের ডেমোক্রেসি প্রোগ্রামের সিনিয়র সহযোগী পরিচালক জোনাথন স্টোনস্ট্রিট বৈঠকে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিএনপি শামা ওবায়েদ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে ড. আব্দুল মঈন খান আলোচনার ফলাফল বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
তিনি বলেন, দুটি প্রধান বিষয়—বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচনের উপর বিশেষভাবে আলোকপাত করে গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, কার্টার সেন্টার আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারে। সম্ভাব্য সময়সীমার মধ্যে নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি কীভাবে সম্ভব, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মঈন স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
তিনি উল্লেখ করেন, সেই সরকার ৯০ দিনের মধ্যে সফলভাবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করেছে, যা আজ পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য সমালোচনার মুখোমুখি হয়নি।
ড. মঈন বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রয়োজনীয় দাবি করা অযৌক্তিক। এটি অবশ্যই ৯০ দিনের মধ্যে করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে ৯ মাস পার হয়ে গেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই, মানুষ এটি নিয়ে কথা বলবে। বিএনপি এই বিষয়টি না তুললেও, জনগণ চুপ থাকবে না।’
তিনি বলেন, তাদের বৈঠকে নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং এই বিষয়ে বিএনপির প্রত্যাশা কী তা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, যদি এই বছরের শেষের দিকে অথবা ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়—
তাহলে তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
সাবেক মন্ত্রী ড. মঈন সতর্ক করে বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় দেরি হলে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ৯ মাস আগের পরিস্থিতির চেয়ে ভালো নয়।’
স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল সরকার থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ড. মঈন বলেন, ‘যদি কোনো কারণে দেশের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়, তাহলে তা ১৮ কোটি মানুষের জন্য সুখকর হবে না...। যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের জন্য ততই ভালো হবে...। আমরা তাদের এটাই বলেছি।’
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান ও সংগ্রামের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন পরিস্থিতির পার করে জনগণের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যেতে চাই।
১৯৮২ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের প্রতিষ্ঠিত কার্টার সেন্টার বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার প্রচার এবং মানবিক দুর্ভোগ লাঘবের জন্য কাজ করে।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকটি করেছে প্রতিনিধিদল।