আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি নেটওয়ার্ক পরিচালনার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি দম্পতি হলেন চট্টগ্রামের আজিম ও মানিকগঞ্জের বৃষ্টি (ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে প্রাথমিকভাবে)। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি ওয়েবসাইটে পর্নো কনটেন্ট তৈরি ও প্রচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গত রোববার (১৯ অক্টোবর) রাতে বান্দরবানে যৌথ অভিযান চালিয়ে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) এবং এলআইসি শাখা তাদের গ্রেপ্তার করে। সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কীভাবে তারা কাজ করতেন
২৮ বছর বয়সী বৃষ্টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে ‘বাংলাদেশের এক নম্বর মডেল’ হিসেবে পরিচয় দিলেও বাস্তবে তিনি আন্তর্জাতিক পর্ন সাইটে সক্রিয় পারফর্মার। ২০২৪ সালের ১৭ মে তার প্রথম ভিডিও প্রকাশিত হয় এবং এখন পর্যন্ত তার আপলোড করা ১১২টি কনটেন্টে ২৬৭ মিলিয়নের বেশি ভিউ রয়েছে বলে একাধিক আন্তর্জাতিক মনিটরিং সূত্রে জানা গেছে।
বৃষ্টি ও আজিম বিদেশি প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি টেলিগ্রাম, টুইটার (এক্স) ও বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ব্যবহার করে তাদের ভিডিওর প্রচারণা চালাতেন। শুধু অক্টোবরের শুরুর দুই সপ্তাহেই ৫০টির বেশি ফেসবুক পেজ থেকে তাদের কনটেন্টের লিংক প্রচার করা হয়েছে।
আজিম ও বৃষ্টির পরিচয়
আজিম চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে একাধিক গণমাধ্যম জানায়, তিনি আগে থেকেই অপরাধচক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পুলিশের নথি অনুসারে, গত ২৫ আগস্ট তিনি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হলেও দ্রুত জামিনে মুক্ত হন।
বৃষ্টি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা। পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তিনি ঢাকায় চলে যান এবং পরবর্তীতে অনলাইনভিত্তিক এডাল্ট কনটেন্ট প্রোডাকশনে জড়ান। নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এলেও বর্তমানে তাদের জীবনযাত্রা সামাজিক মাধ্যমে বিলাসবহুল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রভাব ও অর্থ আয়ের কৌশল
তদন্তে দেখা গেছে, বৃষ্টির নামে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল খোলা হয়েছে, যা তারা দু’জনে যৌথভাবে পরিচালনা করেন। ওই চ্যানেলে নিয়মিত পেইড ভিডিও বিক্রি করা হতো। পাশাপাশি তারা আয়ের স্ক্রিনশট প্রকাশ করে তরুণ-তরুণীদের এই কাজে যুক্ত হওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। বৃষ্টির ফেসবুকে প্রায় ৪৯ হাজার এবং ইনস্টাগ্রামে ১২ হাজার অনুসারী রয়েছে।
আইনের চোখে অপরাধ
বাংলাদেশের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ অনুযায়ী, পর্নোগ্রাফি তৈরি, প্রচার ও সংরক্ষণ ফৌজদারি অপরাধ। সিআইডি বলছে, এই দম্পতি শুধু অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না, বরং দেশে বসে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন এবং অন্যদেরও এই চক্রে যুক্ত করছিলেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে সিআইডি দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করবে বলে জানা গেছে।