বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভেড়ামারা ৫০ শয্যার হাসপাতালে জনবল সংকট, ভোগান্তিতে রোগী

  • ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি   
  • ৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১৮:১২

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট, অনিয়ম, জনবল ঘাটতি ও দালাল চক্রের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে।

স্বনামধন্য এ হাসপাতালটি শুধু ভেড়ামারা নয়, পার্শ্ববর্তী দৌলতপুর, মিরপুর ও পাবনার ঈশ্বরদী অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল। অথচ চিকিৎসকের অপ্রতুলতা আর দুর্নীতির কারণে দীর্ঘদিন যাবত রোগীরা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। এ হাসপাতালের ডা. পলাশচন্দ্র দেবনাথের অবৈধভাবে বিদেশযাত্রা, হাসপাতালের ফটকের সামনে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্টাফ কর্তৃক রোগী ও তার স্বজনদের টানাহেঁচড়া, প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে সবমিলিয়ে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান অবস্থা চরম বিপর্যস্ত। জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সমস্যা আরও তীব্র হবে বলে জানান, রোগী ও তার স্বজনরা।

ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুমোদিত ২৫ জন চিকিৎসকের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো-সার্জারি) ও ৩ জন মেডিকেল অফিসার রয়েছেন। ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদ শূন্য রয়েছে জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী), জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথিসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন)।

এছাড়া আইএমও, এনসথেটষ্ট, এম.ও (এ.এমসির) পদ খালি রয়েছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে একজন করে মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও সবগুলোই পদ শূন্য। শুধু সাতবাড়ীয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিয়োগকৃত মেডিকেল অফিসারকে পার্শ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে। ফলে সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা প্রায় অচল।

হাসপাতালে ১ জন মিডওয়াইফ, ১ জন জুনিয়র নার্স, ১ জন অ্যাকাউন্টেন্ট, ১ জন ক্যাশিয়ার, ৩ জন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ১ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিন, ১ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) ২ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ১২ জন স্বাস্থ্য সহকারী, একজন কম্পাউন্ডার, অফিস সহায়ক, তিনজন ওয়ার্ড বয়, দুজন আয়া, দুজন কুক, একজন মালি, একজন নিরাপত্তা প্রহরী, তিনজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুজন অফিস সহায়কের পথ শূন্য রয়েছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে বরাদ্দকৃত সিটের বাইরে রোগী ভর্তি হয়ে থাকেন।

সে কারণে রোগীদের ফ্লোরে অথবা বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। গাইনী ও অ্যানেসথিসিয়া ডাক্তার না থাকায় অপারেশন বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন আউটডোরে প্রায় ৪ শতাধিক রোগী সেবা নিয়ে থাকেন।

তা ছাড়াও হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ ও প্রসূতি সেবাও ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের অদক্ষ অপারেটার ও এক্স-রে মেশিন বিকল, প্রয়োজনীয় ল্যাব টেস্টও করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে রোগীরা বাধ্য হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল বা বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে ছুটে চলেছেন। ডাক্তার না থাকায় হাসপাতালে সনোগ্রাফি করা বন্ধ রয়েছে।

হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. পলাশ চন্দ্র দেবনাথ (কোড নং-১৩১৯০০) ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি নেন। কিন্তু ছুটি শেষে আর অফিসে যোগ দেননি। জনশ্রুতি রয়েছে, তিনি কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে চলে গেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। রোগীরা জানান, ‘সরকারি বেতন গ্রহণ করে ডাক্তার যদি অবৈধভাবে বিদেশে চলে যান, তাহলে আমাদের চিকিৎসাসেবা কে দেবে।’ ডা. দেবনাথের দীর্ঘদিন অনুপস্থিতি ইতোমধ্যেই হাসপাতালের চিকিৎসা সংকটকে প্রকট করেছে।

হাসপাতালের ভেতরে দালাল চক্র সক্রিয় থেকে রোগীদের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সরকারি বরাদ্দের খাবারও রোগীরা প্রায়ই সঠিকভাবে পান না। ফলে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে হাসপাতালটি।

হাসপাতালের ফটকের সামনে রয়েছে তিনটি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অভিযোগ রয়েছে, যেকোনো টেস্টের সময় এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা রোগীদের হাত ধরে টানাটানি করে নিজেদের সেন্টারে নিতে চেষ্টা করে। এতে রোগীরা বিব্রত ও ভোগান্তিতে পড়েন।

সম্প্রতি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নির্দেশে হাসপাতালের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারী বদলি হয়েছেন। এতে স্বাস্থ্য সহকারী, দপ্তরি, ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন দৌলতপুর, মিরপুর ও ঈশ্বরদী অঞ্চলের মানুষও। কিন্তু চিকিৎসকের অভাব, পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা আর অনিয়মের কারণে তাদের অবস্থাও নাভিশ্বাস। শেষ পর্যন্ত অনেককে বাধ্য হয়ে কুষ্টিয়া শহরের হাসপাতালে যেতে হয়, যা সময়, অর্থ ও বিড়ম্বনা উভয়ই বাড়িয়ে দেয়।

ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডা. পলাশ চন্দ্র দেবনাথ অনুপস্থিত থাকায় ঊর্ধ্বতন কার্যালয়ে একাধিককার আবেদন করা হয়েছে।’ ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালের অনিয়ম ও চিকিৎসক সংকট বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে চিকিৎসক সংকট একটি জাতীয় সমস্যা। হাসপাতালের অনিয়মের বিষয়েও যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর