‘কোনো দয়ালু মানুষ যদি আমারে একটা ঘর বানাইয়া দিতো আর একটা টিউবওয়েল বসাইয়া দিত, আমি সারাজীবন নামাজ পড়ে তার জন্য দোয়া করতাম। রাতে যদি একটু শান্তিতে নামাজ পড়তে আর ঘুমাতে পারতাম, তবে সব দুঃখ ভুলে যাইতাম।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন বৃদ্ধা ফিরোজা বেগম।
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজা বেগমের বয়স এখন ৭৩ বছর। ২০ বছর আগে বিধবা হওয়া এই নারী এখন একেবারেই নিঃস্ব। ভাঙা মাটির ঘর ছাড়া তার কোনো জমিজমা নেই। চারপাশের মাটির বেড়া হেলে পড়েছে, যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। মরিচাধরা টিনের চালের অসংখ্য ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। ফলে ঝড়-বৃষ্টির দিনে তার দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। রাতে একটি পুরোনো জলচৌকির ওপর বিছানো জায়নামাজে ঘুমাতে হয় তাকে।
অন্যের টিউবওয়েল থেকে পানি আনা ও ল্যাট্রিন ব্যবহার করতেও অপমানজনক কথা শোনতে হয় তাকে। তাই নতুন একটি ঘরের পাশাপাশি নিজস্ব টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিন চান তিনি, যাতে অন্তত নিরাপদভাবে জীবনযাপন করতে পারেন।
চোখে ছানি পড়ায় কয়েক বছর আগে অপারেশন করা হলেও এখন চশমার সাহায্যে আবার কোরআন পড়তে পারেন ফিরোজা। কিন্তু প্রতিরাতে আতঙ্কে থাকেন- এই বুঝি ঝড়-বৃষ্টি এলো! বয়সের কারণে চলাফেরার শক্তি কমে গেছে, শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ।
ফিরোজা বেগমের তিন ছেলে থাকলেও তারা সংসারের টানাপোড়েনে মায়ের জন্য কোনো সহায়তা দিতে পারছেন না। ফলে এক ভাঙা ঘরেই মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাকে।
প্রতিবেশীরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই এ দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ফিরোজা। কোনো সরকারি সহায়তা তিনি এখনো পাননি। স্থানীয়রা মনে করেন, দ্রুত সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে তার জন্য একটি ঘর, টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করা উচিত। পাশাপাশি তাকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনাও জরুরি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি অবগত হয়েছি, শিগগিরই তার জন্য সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ জানান, ফিরোজা বেগমকে সরকারি সহযোগিতার আওতায় আনা হবে।