বরিশালে এ বছর রূপালী ইলিশের ভরা মৌসুম শেষ হতে চলেছে, কিন্তু নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ দেখা মেলেনি। মা ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম রক্ষার জন্য আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই সময়ে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলী সুজা জানিয়েছেন, সরকারিভাবে নির্ধারিত এই নিষেধাজ্ঞা শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও তালিকাভুক্ত জেলেদের সঙ্গে ইতোমধ্যেই বৈঠক করা হয়েছে।
মেঘনা নদী বেষ্টিত হিজলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম জানিয়েছেন, গত বছর সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এ বছর পূর্ণিমা ও আমাবস্যার হিসাব অনুযায়ী ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ধার্য করা হয়েছে।
বরিশালের পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামে দেখা গেছে, মৌসুম শেষ হতে মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও ইলিশের সরবরাহ কম এবং দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মোকামের আড়তদার নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, শনিবার মোট দেড়শ’ মনের মতো ইলিশ মোকামে উঠেছে, যেখানে এর আগের দিন ছিল আড়াইশ’ মণ। দামও বেড়েছে- এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১৭৫ টাকায়, এলসি সাইজের (৭০০-৯০০ গ্রাম) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকায় এবং ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৫০০ টাকায়।’
মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নদীতে ইলিশ কমে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তন, পানি সংকট, ডুবোচর, নাব্য সংকট এবং অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবহারের বৃদ্ধি। সাগরের উপর জেলেদের নির্ভরতা বাড়লেও, সেখান থেকেও মোট মাছের ৬০ ভাগ আসে, বাকি ৪০ ভাগ নদী ও অন্যান্য উৎস থেকে আসে। এ কারণে নদীর ৪০ ভাগ ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
বরিশাল মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়া এলাকার জেলে তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘নদীতে ইলিশ এখন কিছুটা মিলছে, তবে আসন্ন ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় এই সময়ের আয় অনেকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম আকন্দও জানিয়েছেন, ইলিশ আহরণ কমার কারণে দামও কমছে না এবং চলতি বছরের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় আরও কম হতে পারে।