হিমালয়-পাদদেশে মোহনীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা, সমতলের চা-বাগান, সীমান্ত ঘেরা প্রকৃতি- সব মিলিয়ে পর্যটনে নতুন গন্তব্য হয়ে উঠছে তেঁতুলিয়া। শনিবার বিশ্ব টুরিজম দিবস উপলক্ষে দেশের পর্যটন মানচিত্রে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সম্ভাবনাময় এক নাম পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। দেশের সর্বউত্তরের এ সীমান্তবর্তী উপজেলা বর্তমানে পর্যটকদের কাছে রূপ নিচ্ছে জনপ্রিয় গন্তব্যে।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তেঁতুলিয়া থেকে বর্ষা শেষে ও শীতের শুরুর দিকে দেখা মেলে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ রূপ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আন্তরিক মানুষের মিলনে গড়ে উঠেছে এক অনন্য পর্যটন পরিবেশ।
এ বছর শরতের শেষভাগে শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি ঘিরে তেঁতুলিয়ায় বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে তেঁতুলিয়ার প্রতিটি দর্শনীয় স্থান। তবে গত দুই দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিললেও আজকে মেঘের আড়ালে কাঞ্চনজঙ্ঘা, তবু নেই হতাশা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘা কিছুটা মেঘে ঢাকা থাকলেও হতাশ হননি আগত দর্শনার্থীরা। শান্ত প্রকৃতি, নদীর ধারে কাশফুল, চা-বাগানের সবুজ সমারোহ এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা মুগ্ধ করেছে পর্যটকদের। কেউ ঘুরেছেন বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট, কেউ উপভোগ করেছেন মহানন্দা নদীর সূর্যাস্ত। কেউ আবার শিশুদের নিয়ে বেড়িয়েছেন রওশনপুর শিশুপার্কে কিংবা আনন্দগ্রামে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মিথিলা জানান, শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে কাঞ্চনজঙ্ঘা না দেখলেও অন্যসব সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। এখানে মানুষের ব্যবহার, নিরাপত্তা ও পরিবেশ খুবই ভালো।
কাঞ্চনজঙ্ঘা নিয়ে তেঁতুলিয়ার স্থানীয় হোটেল-মোটেলগুলোতে দেখা দিয়েছে আগাম বুকিংয়ের হিড়িক।
স্থানীয়রা জানান, শরৎকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা এক বিরল ঘটনা। সাধারণত অক্টোবর মাসে আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করে এবং তখন সহজে দেখা মেলে দূরের কাঞ্চনজঙ্ঘা। কিন্তু এবার সেপ্টেম্বরের শুরুতেই টানা দুদিন এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারায় স্থানীয়দের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।
তেতুলিয়া এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতি বছরই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য অপেক্ষা করি। সাধারণত শীতের একটু আগে বা শীতের শুরুতে ভালোভাবে দেখা যায়। এবার এত তাড়াতাড়ি দেখা মিলবে ভাবিনি। গত শুক্রবার বিকালে হঠাৎই পাহাড়ের চূড়াটা দেখা গেল। মনে হচ্ছিলো, হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে ফেলবো। সত্যি, এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা।
তেতুলিয়া উপজেলা সাবরেজিস্টার অফিসের মোবারক হোসেন বলেন, ডাকবাংলো দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। সাদা বরফে মোড়া পাহাড়টা এত সুন্দর লাগছিলো যে মনে হচ্ছিল, একেবারে হাতের কাছেই আছে।
এদিকে, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
টুরিস্ট পুলিশের উপপরিদর্শক মো. রাব্বুল ইসলাম বলেন, তেঁতুলিয়া অত্যন্ত নিরাপদ পর্যটন এলাকা। দর্শনার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারেন, সে জন্য আমরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, প্রতি বছর শরৎ-হেমন্তে এখানে পর্যটক বাড়ে। গত দুই দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলছে। গত দুই দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায়। আর এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন। যেহেতু একদিকে তেঁতুলিয়া পর্যটন এলাকা অন্যদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার মৌসুম। তাই পর্যটকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে আমরা নজর রেখেছি। তারা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে নজর রাখছি। আবাসিক হোটেল থেকে শুরু পরিবহনের লোকজনের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে, যাতে পর্যটকদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তারা দেখেন। আর থানা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন মিলে আমরা তৎপর রয়েছি। পর্যটকরা কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, তেঁতুলিয়া ও এর আশেপাশের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো তুলে ধরা হলো। কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন পয়েন্ট;
* বাংলাবান্ধা চারদেশীয় বর্ডার *জিরোপয়েন্ট
* মহানন্দা নদী ও সূর্যাস্ত * কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট * ডাকবাংলো পিকনিক কর্নার * রওশনপুর শিশুপার্ক ও আনন্দগ্রাম।
এছাড়া নদী ও সীমান্তঘেঁষা প্রকৃতি ও পাহাড়ি আবহে স্থানীয় সংস্কৃতিও পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে।
তেঁতুলিয়া এখন আর শুধু সীমান্তবর্তী এক উপজেলা নয়- বরং হয়ে উঠছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পর্যটন হাব। সঠিক পরিকল্পনা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে এই অঞ্চল হতে পারে দেশের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র।