কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলার প্রান কেন্দ্র বাণিজ্যিক এলাকা বামন্দী ইউনিয়নে একত্রিশ বছর পূর্বে স্থাপন করা হয় গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের উপকেন্দ্র পশু হাসপাতাল।
এই এলাটিতেই অবস্থিত খুলনা বিভাগের ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশুহাট। যেখানে বিভাগের কয়েকটি জেলার হাজার পশুপালনকারি খামারি ও ব্যবসায়ীদের আনাগোনা এই বামন্দীতে।
এসব দিক বিবেচনা করেই ১৯৯১-১৯৯২ সালের দিকে নির্মাণ করা এই গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের উপকেন্দ্র পশু হাসপাতাল। এটি নির্মাণের ঠিক তিন থেকে চার বছর পরই বন্ধ হয়ে যায় উপকেন্দ্রটি।
এরপর থেকে তিন দশক ধরে এভাবেই পড়ে রয়েছে হাসপাতালটি। এর মধ্যে দেখা মেলেনি কোনো প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তার। উপায় না পেয়ে পশুর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য যেতে হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে। এতে একদিকে যেমন বেড়ে যায় ব্যয়, তেমনি বাড়ে কষ্ট।
আর বতর্মান চিত্র আরো ভয়াবহ, হাসপাতালটির প্রবেশ পথের সামনে রাখা হয়েছে বালুর স্তূপ। এখানে সারাদিন ধরে বালির ব্যবসা, আর রাতে পরিনত হয় মাদকসেবীদের আকড়া।
স্থানীয় খামারিদের দাবি, দ্রুত এই পশু হাসপাতালটি চালু করা হোক, কর্তৃপক্ষের কাছে এটিই চাওয়া।
বামন্দী পশুহাট মালিকদের দাবি, জেলার সবচেয়ে বেশি ভ্যাট দিয়ে থাকে বামন্দী পশুহাট কর্তৃপক্ষ। তাই এই পশু হাসপাতালটি চালু করা খুব দরকার।
এদিকে গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে বলা হয়েছে, অতিদ্রুতই-এর কাগজপত্র প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
স্থানীয় জনি আহমেদ বলেন, আমার বয়স পঁচিশ বছরের মতো হবে। আমি জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে আছে। এত দিন ধরে পড়ে থাকার কারণে পশু হাসপাতালটি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু দাঁড়িয়ে আছে ঘরটি। হারিয়ে গেছে পশু চিকিৎসার সরঞ্জাম ও দরজা-জানালা।
মানুষ এখন এটির সামনে বালি রেখে ব্যবসা করে এটিকে বালির ঘাট বানিয়ে ফেলেছে। তবে দ্রুত এ ঘরটি সংস্কার করে নতুনভাবে চালু করা হোক।
বামন্দী ব্যবসায়ীক সমিতির সভাপতি ও ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশুহাট ইজারাদার মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘হাসপাতালটি দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে একেবারে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। তাই আমাদের জোর দাবি, এই পশু হাসপাতালটি চালু করা হোক।
আমরা এই হাটটি থেকে বছরে জেলার সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদান করে থাকি। আমাদের শুক্র ও সোমবার এই দুদিন হাটে ৮ থেকে ১০ হাজার পিস গরু ছাগল আমদানি হয়ে থাকে। এই পশু যেকোনো সময় অসুস্থ হতে পারে। পশু হাসপাতালটি চালু হলে খামারি ও ব্যবসায়ীরা অনেক উপকৃত হবে। কেননা খামারিদের পশু অসুস্থ হলে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য উপজেলায় যেতে হয়। এটা অত্যন্ত কষ্টকর।
খামারি আ. জাব্বার বলেন, আমরা খামারে গরু পালন করি আর পশু অসুস্থ হলে দশ কিলোমিটার দূরে উপজেলা প্রাণিসম্পদে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। আর আমাদের বামন্দী পশু হাসপাতালের ডাক্তার ডেকে আনতে গেলে টাকা দিয়ে নিয়ে আসা লাগে। তাই এই হাসপাতালটি চালু হলে আমরা গরু চাষিরা অনেক উপকৃত হবো।
স্থানীয় পশু চিকিৎসক ইউসুফ আলী বলেন স্থানীয় গবাদিপশু পালনকারিদের কথা ভেবে, আমিসহ আরও কিছু লোক টাকাপয়সা তুলে এই জমি ক্রয় করেছিলাম। পরে উপজেলা পরিষদের টাকা দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। আমিও চাই পশু হাসপাতালটি আবার চালু করা হোক।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোত্তালেব আলী বলেন, বামন্দীর উপকেন্দ্র পশু হাসপাতালটি ১৯৯০ অথবা ১৯৯১ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘ ৩১ বছর পড়ে থাকায় নানা সমস্যায় জর্জরিত উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিসের উপকেন্দ্রটি। এটি বামন্দী ইউনিয়নে অবস্থিত। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পশু হাসপাতালটি নিয়ে ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
মোত্তালেব আলী আরও বলেন, বিষয়টি জানার পরই আমরা সরেজমিনে পরিদর্শনও করেছি। সেখানে তিনটি রুম বিশিষ্ট ঘর ছাড়া আর অবশিষ্ট কিছুই নেই। কোনো জানালা, দরজা বা চিকিৎসার সরঞ্জাম দেখতে পাইনি। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিভিন্ন দপ্তরে যেতে হচ্ছে।