কেউ কেউ চোখ মুছছেন, কেউবা আঁকড়ে ধরছেন প্রিয় শিক্ষকের হাত, কেউ আবার নিঃশব্দে ফেলছেন অশ্রু। চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে বিদায়ের বিষণ্ণ সুর। আর সেই সুরের মাঝে ফুলের পাঁপড়ি বর্ষণের সঙ্গে ঘোড়ার গাড়িতে করে এগিয়ে চলছেন একজন শিক্ষক । এমনই এক আবেগঘন পরিবেশে রাজকীয় বিদায় জানানো হলো আনোয়ারা উপজেলার বখতিয়ারপাড়া চারপীর আউলিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী মাওলানা কাজী মো. আবুল কালামকে।
দীর্ঘ ৪১ বছর সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা শেষে কর্মজীবন থেকে অবসর নিলেন এই বরেণ্য শিক্ষক। শুধু শিক্ষক নন, ছিলেন একজন অভিভাবকতুল্য মানুষ, শিক্ষার্থীদের আদর্শ, সহকর্মীদের প্রেরণার উৎস।
গতকাল সোমবার সকাল থেকেই মাদ্রাসা চত্বরে এক ভিন্ন রকম পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। বিদায়ী শিক্ষককে ঘিরে আয়োজিত হয় নানা কর্মসূচি। শুরুতেই পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর একে একে হামদ-নাত, আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন করেন শিক্ষার্থীরা। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, বিদায়ী শিক্ষক মাওলানা কাজী মো. আবুল কালাম ১৯৮৪ সালে আনোয়ারার স্বনামধন্য বখতিয়ারপাড়া চারপীর আউলিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় পাঠদান শুরু করেন। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি তার নিষ্ঠা, ধর্মীয় জ্ঞান এবং নৈতিক শিক্ষা দিয়ে হাজারও শিক্ষার্থীর জীবন গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। তার হাত ধরে অনেকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন।
এমন শিক্ষকের বিদায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে জানে আলম নামের এক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক আমাদের পিতার সমতুল্য। আমার পিতা আমাদের জন্ম দিলেও শিক্ষকরা আমাদের জীবন দিয়েছেন। শিক্ষকদের শাসন আমাদের চলার পথকে মসৃণ করে। আমাদের এই শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীর খুব পছন্দের একজন ছিলেন যার কারণে সবাই তার বিদায়ী শোকার্ত।
বিদায়ী শিক্ষক মাওলানা কাজী মো. আবুল কালাম জানান, জীবনের বৃহৎ একটি অংশ এই প্রতিষ্ঠানে কাটিয়েছি। চেষ্টা করেছি নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব এবং শিক্ষার্থীদের হক যথাযথভাবে পালন করতে। হয়তো আনুষ্ঠানিক এই প্রতিষ্ঠানে আর ক্লাস নেওয়া হবে না; কিন্তু আমৃত্যু যদি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে থাকতে পারতাম সেটাই হতো আমার জন্য বড় পাওয়া।
বখতিয়ারপাড়া চারপীর আউলিয়া ফাজিল মাদ্রাসার পরিচালক অধ্যক্ষ কাজী মো. আবদুল হান্নান বলেন, আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষক, আমার সহকর্মী দীর্ঘ ৪১ বছর তার শিক্ষকতা জীবন শেষ করেছেন। আমরা চেয়েছি তার বিদায়টা সম্মানজনক করতে। আমার দেখেছি যেসব শিক্ষক প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নেয় তাদের একটি ছাতা, কাপড় ইত্যাদি দিয়ে বিদায় দিত যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু এবং অসম্মানজনক। তাই ব্যতিক্রম কিছু করার প্রয়াস থেকে এই আয়োজন।
এদিন দিনব্যাপী আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. ফেরদৌস হোসেন, প্রধান আলোচক হিসেবে পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ ওসমান গণি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অন্যানের মধ্যে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ, শিক্ষকরা, পরিচালনা কমিটি সদস্য ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।