জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ময়েনউদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সময়মতো শ্রেণিকক্ষে না আসার বিষয়ে মন্তব্য করায় ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে মারধর করেছেন এক সহকারী শিক্ষক। এমন অভিযোগ ওঠায় সহকারী শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদারকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বেলা পৌঁনে ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মানবিক শাখার একটি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৩০ জন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বিদ্যালয় সূত্র জানা যায়, নির্ধারিত সময় সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ক্লাস শুরু হলেও ৭ম শ্রেণির ‘ক’ শাখায় দায়িত্বরত শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার অনুপস্থিত ছিলেন। প্রায় ২৫ মিনিট পর সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে তিনি শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছিলেন। এ সময় পাশের নবম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী ক্লাস থেকে বেরিয়ে বলে, স্যার তো কখনোই ঠিক সময়ে আসেন না, আজও দেরি করে আসছেন। ক্লাস কি হবে আর!
এই মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষক নাফসি তালুকদার নবম শ্রেণির কক্ষে প্রবেশ করে জানতে চান মন্তব্যটি কে করেছে। কোনো শিক্ষার্থী জবাব না দিলে তিনি উপস্থিত ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে এলোপাতাড়ি বেত্রাঘাত করেন। এতে সবাই কমবেশি আহত হয়।
আঘাতপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা প্রথমে প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) কাছে অভিযোগ করলে তিনি ব্যবস্থা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করতে বলেন। পরে শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধ হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহানের কাছে সরাসরি অভিযোগ করেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর ইউএনও তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান শিক্ষককে অভিযুক্ত শিক্ষককে শোকজ করার নির্দেশ দেন।
নবম শ্রেণির আহত শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম বলেন, আমাদের সহপাঠীদের মধ্যে একজন বলে নাফসি স্যার দেরিতে ক্লাসে যাচ্ছে একথা বলায় স্যার ক্লাসে এসে আমাদের ৩৩ জন সহপাঠীকে বেত্রাঘাত করতে শুরু করে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ও ইউএনও স্যারের কাছে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী আকিব হোসেনের বাবা আবু কালাম বলেন, শিক্ষক অপরাধ করবেন, আবার শিক্ষার্থীদের মারধর করবেন-এটা মেনে নেওয়া যায় না। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য। আমরা অভিভাবকরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
কালাই ময়েনউদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম বকুল বলেন, নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদারকে শোকজ করা হয়েছে এবং তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার বলেন, কোনো ব্যক্তিগত রাগ বা ক্ষোভ থেকে নয়, শাসনের উদ্দেশেই শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করেছি।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্ত শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।