বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার কারণে শিক্ষক হাওরে থাকতে চান না: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

  • রাকিবুল হাসান রোকেল, স্টাফ রিপোর্টার-কিশোরগঞ্জ   
  • ২৩ আগস্ট, ২০২৫ ২২:৪০

সামজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার কারণে হাওর এবং চরাঞ্চলের দুর্গম এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা থাকতে চান না এবং তারা শহরে চলে আসতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের সাথে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, আমার বাড়ি হাওরে আমি সবই জানি। বিষয়গুলো নিয়ে আমি পরিষ্কার। এটা শুধু হাওরের সমস্যা না। সব জায়গাতেই চরাঞ্চলে শিক্ষকেরা থাকতে চায় না এবং তারা শহরে আসতে চায়। এই বিষয়টি সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা শুধুমাত্র যদি আমাদের সমস্যা হতো তাহলে সমাধান করা যেতো। আমাদের নিয়ম কি? আমাদের নিয়ম হচ্ছে শিক্ষকেরা উপজেলাতে নিয়োজিত হবেন, যেখানে চাকরি পাবেন সেখানে থাকবেন। কিন্তু বদলির বিষয়গুলো কোথা থেকে আসে? উপর থেকে আসে। তদবিরগুলো কোথা থেকে আসে? উপর থেকে আসে। উপর থেকে আসে সমস্যাগুলো। এগুলো কিসের সমস্যা? এগুলো আমাদের সামাজিক সমস্যা, আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা। বিষয়টি জটিল উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এগুলোকে যতটুকু সম্ভব কাটিয়ে উঠার জন্য চেষ্টা করছি। আমরা বরাবরই চাই হাওরে শিক্ষকেরা থাকুক। কিন্তু বিভিন্নভাবে বিষয়গুলো হয় না।

সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারগণও একই গ্রেডে আছে, এক্ষেত্রে প্রশাসনিক চেইন অব কমান্ড বজায় রাখার জন্য এটিইওদের গ্রেড উন্নয়নে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই একই গ্রেডের কর্মকর্তারা রয়েছেন। যারা নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা। কলেজগুলোতে যান যেখানে প্রিন্সিপাল এবং প্রফেসররা একই। মেডিকেল কলেজে যান সেখানেও একই। এমন অনেক জায়গাতেই রয়ে গেছে। ফলে এইটা হলেই যে করা যায় না এটা ঠিক না। এটা হচ্ছে আমার অবস্থান। দুই নাম্বার অবস্থান তাদের গ্রেডের উন্নতি প্রয়োজন কিনা? অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ তারা দশম গ্রেডে ঢুকছেন তাদের তো পদোন্নতি প্রয়োজন। সুতরাং তাদের গ্রেড উন্নতি করা প্রয়োজন। আমি মনে করি এটা প্রয়োজন। আমরা সেজন্য কতৃপক্ষের কাছে লিখছি যে তাদের গ্রেডের উন্নতি করা হউক। উন্নতি না হলেই চেইন অফ কমাণ্ড ভেঙে যাবে এটি আমরা ঠিক মনে করি না।

মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অভিভাবকদের আর্কষণ করার জন্য। এটা তাদের ব্যবসা। আর অভিভাবকরা মনে করে সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করলে প্রেস্টিজ চলে যাবে। অনেক কিছু চলে যেটা সংবিধান বা আইন মেনে চলে না। কিন্তু আমাদের অবস্থান কি সেটা জানা আমাদের কর্তব্য। আমাদের সংবিধান বলে শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। আমরা একটা আইন করেছি বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা। অর্থাৎ দেশের প্রত্যেকটা শিশু অবৈতনিক শিক্ষা পাবে। এজন্য অভিভাবকরা প্রত্যেকটা শিশুকে এটা গ্রহণ করাতে বাধ্য। আমাদের শিশুদের ছোট বেলা থেকেই বিভিন্নভাবে ভাগ করে ফেলছে। আমাদের যাদের অর্থের অভাব নেই তারা দামি দামি স্কুল খুললাম। আমাদের যারা নীতিনির্ধারক তাদের সন্তানেরা পড়ছে দামি স্কুলে। সাধারণ মানুষের সন্তানেরা পড়ছে সরকারি স্কুলে। ফলে সরকারি স্কুল, অবৈতনিক স্কুল যে মনোযোগ পাওয়ার কথা তা পায় না। সেজন্য আমাদের শিক্ষাখাতে বরাদ্দের প্রয়োজন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোঃ মাসুদ রানা বলেন, জেলায় ৮০৫ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিহীন রয়েছে। অহেতুক কারন দেখিয়ে যেন কেউ প্রশিক্ষণ থে‌কে‌ বিরত না থা‌কেন। নির্বাচন ব্যতীত অন্যান্য দায়িত্ব যেনো পালন করতে না হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি। প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেড পে‌য়ে‌ছেন। এতে আপনা‌দের প্রতিও রা‌ষ্ট্রের চা‌হিদা বে‌ড়ে‌ছে, সে‌দিক‌টি খোয়াল রাখ‌তে হ‌বে। সহকা‌রি শিক্ষক‌দেরও মূল‌্যায়ন করা প্রয়োজন। স্কুল ফি‌ডিং কার্যক্রম চালু হ‌বে ১৮০‌টি স্কু‌লে। খা‌দ্যের মান নি‌য়ে প্রশ্ন উঠ‌লে নমুনা সংগ্রহ ক‌রতে হবে। খাদ্যের নমুনাতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ কর‌তে হ‌বে। ইউপিইটি‌সি ইন্সট্রাক্টররা ম‌ডেল স্কু‌লে স‌ঠিকভাবে ম‌নিট‌রিং ক‌রে না। পি‌টিআই'র ইন্সট্রাক্টরদেরও এ কা‌জে লাগা‌তে হ‌বে। প্রাথ‌মি‌কের সকল শূন‌্যপ‌দ পূর‌নের বিষ‌য়ে দ্রুত ব‌্যবস্থা নেয়া হ‌বে। বিদ্যালয়ের জ‌মি সংক্রান্ত মামলা জট কমানোর জন‌্য জেলা প্রশাসক ব‌্যবস্থা নি‌বেন ব‌লে তিনি আশা ক‌রেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মোঃ শামসুজ্জামান মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমাদের এই মূহুর্তে কিন্তু শিক্ষকদের শূন্য পদের সংখ্যা বেশি নয়। সাড়ে ১৩ হাজার পদ শূন্য। আমরা আশা করতেছি এই মাসের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি দিব এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করব। জেলায় ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলাতেই মিড ডে মিল চালু আছে।

এ সময় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এনডিসি (পলিসি এন্ড অপারেশন) মোহাম্মদ কামরুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মুকিত সরকার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মজিব আলম। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর