সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন স্বাধীনচেতা ও প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। ব্যক্তি জীবনে কোন ধরণের রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ও বাজে আড্ডায় জড়িত না থাকায় গ্রামের লোকজনের কাছে অদ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে বেশ সমাদৃত ছিলেন।
তিনি ফুলবাড়িয়া পৌর সদরের আল হেরা স্কুল থেকে এসএসসি শেষে ২০০২ সালে ভর্তি হন সিলেট এম সাইফুর রহমান কলেজে। তার সহোদর জসিম উদ্দিন গাজীপুরে ব্যবসা করায় ভাইয়ের বাসায় থেকেই গাজীপুর ভাওয়াল কলেজ থেকে অনার্স করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটিভ হিসেবে চাকুরি করেন। বাবা মা বারণ করলেও ২০১২ সাল থেকেই পুরোদমে সংবাদপত্রে কাজ শুরু করেন। যার দরুণ পেশাগত কারণে পরিবার নিয়ে তিনি গাজীপুরের চান্দনা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে চান্দনা চৌরাস্তার ফুটপাত ও দোকানপাট থেকে চাঁদাবাজির ঘটনা লাইভ করেন তুহিন। পরে নিজ ফেইসবুকে “ যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য গাজীপুর চৌরাস্তা” লিখে ভিডিও পোস্ট করেন। এর পরপরই মসজিদ মার্কেটের সামনে চায়ের দোকানে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বলে নিহতের স্বজেনরা জানান।
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে। তিনি বয়োবৃদ্ধ হাসান জামাল ও সাবিহা খাতুনের পুত্র। পাঁচ ভাই ও দুই বোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ। সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মৃত্যুতে গ্রাম জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতের পরিবারের লোকজন বিচারের দাবি জানিয়ে আহাজারী করছেন।
সরেজমিনে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখাযায়, নিহতের মা সাবিহা খাতুন বকুল (৭৫) বিলাপ করে বলছেন আমার ছেলে তুহিন কালকেও বলেছে, আমি তোমাকে আগামী মাসে চোখের ডাক্তার দেখাবো, আম্মা কোন চিন্তা করিও না তুমি ভালো হয়ে যাবা । এখন আমগরে কেডা খোঁজ নিবো। কেডা মোবাইল করবো? আমগরে কেডা দেখবো
বলে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। একই অবস্থা বয়োবৃদ্ধ পিতা হাসান জামিলের। দুদিন আগেও তাকে ওষুধ কিনার টাকা পাঠিয়েছেন বলে চিৎকার করছেন।
স্বজেনরা জানান সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ২০০৫ সাল থেকে গাজীপুরে বসবাস করছেন। স্ত্রী মুক্তা আক্তার সেখানকার একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে চাকুরি করতেন। স্ত্রী সন্তান নিয়ে সেখানেই ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। তাদের ঘরে সাত বছর বয়সি তৌকির তিন বছর বয়সি ফাহিম নামে দুই শিশু সন্তান রয়েছে। আসাদুজ্জামান তুহিন কে হত্যা করায় তার দুই শিুশু সন্তান, স্ত্রী ও বয়োবৃদ্ধ বাবা মায়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিৎ হয়ে পড়েছে। তুহিন হত্যার বিচারের পাশাপাশি সরকারি অথবা ব্যক্তি উদ্যোগে তাদের পরিবারের পাশে দাড়ানোর অনুরোধ করেন।
প্রতিবেশি মোফাজ্জল হোসেন বলেন, তুহিন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার বৃদ্ধ বাবা মা তার উপর নির্ভরশীল ছিলেন। এখন এ পরিবারটি কিভাবে চলবে, কী করবে বুঝতেছি না।
চাচাতো ভাই নাছির উদ্দিন বলেন, আমার ছোট ভাইকে যারা প্রকাশ্যে হত্যা করেছে তাদের প্রকাশ্য ফাঁসি চাই, আমাদের আর কোন কিছুই চাওয়ার নাই।
বোন সাইদা আক্তার রত্না বলেন, মাঝে মাঝে আমাদের খোজ খবর নেয়, আমার ভাই কোন দিন কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিন না, কখনো খারাপ ছেলেদের সাথে আড্ডা দিত না, কেন আমার ভাইকে হত্যা করা হলো? আমার ভাইয়ের কি অপরাধ আমরা বিচার চাই। পুলিশ কেন আসামীদেরকে গ্রেপ্তার করছেনা এর জবাব চাই।
এদিকে তুহিন হত্যায় জড়িত সন্ত্রাসীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে তার নিজ মাতৃভূমি ফুলবাড়িয়াতে শুক্রবার সকালে ফুলবাড়িয়া প্রেসক্লাবের আয়োজনে সাংবাদিকরা মানবন্ধন করেন। পরে বাদ মাগরিব দ্বিতীয় জানাযা নামাজ শেষে তাকে বাড়ির পাশেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।