মাকাল ফল—বাংলায় অতি প্রচলিত একটি কথা, যার অর্থ উপরে সুন্দর হলেও ভিতরে অন্তঃসারশূন্য ছাঁই। ঢাকার আবহাওয়ারকে আজ এই শব্দের সঙ্গে তুলনা করলে মন্দ হয় না! কারণ আজ সকালে ঢাকার পরিবেশ ছিল বেশ মনোরম, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, সঙ্গে ঠান্ডা মৃদু বাতাস।
ধারণা করা হচ্ছিল, এই সুন্দর আবহাওয়ায় ঢাকার বাতাসের মানে উন্নতি দেখা যাবে। তবে দেখা গিয়েছে তার পুরোপুরি উল্টোচিত্র। ঢাকার বাতাসের মানে বরং গতকালের তুলনায় অনেকটা অবনতি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর হলো ৮৯। এই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকার চতুর্দশ স্থানে উঠে এসেছে ঢাকা।
গতকাল (সোমবার) একই সময়ে একিউআই স্কোর মাত্র ৫৪ নিয়ে তালিকার ৬৪তম স্থানে নেমে গিয়েছিল ঢাকা।
যদিও বায়ুমান সূচক অনুযায়ী গতকালের মতো আজও ঢাকার বাতাসের মান ‘মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে, তবে স্কোর অনুযায়ী গতকাল বায়ুমান ‘ভালো’র কাছাকাছি থাকলেও আজ কিন্তু তা নেই। বরং আজ ‘সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হয়ে ওঠার কাছাকাছি চলে গেছে ঢাকার বাতাস। তাই এই মনোরম আবহাওয়াতেও প্রাণখুলে নিশ্বাস নিতে ঢাকাবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
কারণ একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভালো’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। অন্যদিকে, এই স্কোর ৫০ থেকে ১০০ মধ্যে থাকলে তা ‘মাঝারি’ বলে গণ্য করা হয়। এরপর একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এদিকে, আজও দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে কঙ্গোর কিনশাসা। শহরটির একিউআই স্কোর ১৯৪। তাছাড়া ১৭১ ও ১৭০ স্কোর নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে চিলির সান্তিয়াগো ও ভিয়েতনামের হ্যানয়।
কণা দূষণের এই সূচক ১৫১ থেকে ২০০ হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে ৩০০-এর বেশি যেকোনো সূচক।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।