বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট ঘোষণা আজ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২ জুন, ২০২৫ ১২:৫৫

* অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতা বিকাল ৩টায় বিটিভি ও বেতারে প্রচার করা হবে * আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা * বাজেটের তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত, পাওয়া যাবে ওয়েবসাইটে

গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘঠিত গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আজ সোমবার ঘোষণা করতে যাচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট। প্রথমবারের মতো বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন তারা। নতুন বছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। পরে তা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাশ হবে। আগামী অর্থবছর সরকারি ব্যয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা চলতি বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হবে ভিন্ন আঙ্গিকে। ধারণ করা বাজেট বক্তৃতা বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচার করা হবে। সংসদ না থাকায় ধারণকৃত জাতীয় বাজেট বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে ফিড নিয়ে অন্য সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও বেতারে একই সময়ে প্রচারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এই বাজেটের সব তথ্য অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

এর আগে সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। সেদিনও ছিল সোমবার। বেলা ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার করা হয়েছিল মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের বাজেট বক্তব্য।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষায় বিশেষ নজর দেওয়া হবে।

এটি হবে নবনিযুক্ত প্রশাসনের প্রথম বাজেট, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বাজেটের একটি বড় অংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য। নির্বাচনের জন্য ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য ৫ হাজার ৯২২ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল।

আগামী বাজেটে গেজেটভুক্ত জুলাই যোদ্ধাদের জন্য থাকছে আলাদা বরাদ্দ। পাশাপাশি তাদের করমুক্ত আয় সীমা হবে সোয়া ৫ লাখ টাকা। রাজস্ব আদায়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পরিবর্তন আসবে শুল্ক করে। ধনীদের কাছ থেকে বেশি কর আদায়ের প্রস্তাব করবেন অর্থ উপদেষ্টা।

এছাড়া অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য থাকছে বিশেষ বরাদ্দ। প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থেকে দেওয়া হবে এককালীন অর্থ, মাসিক ভাতা, দেশে-বিদেশে চিকিৎসা খরচ এবং কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ। একই তহবিলের অর্থে তাদের জন্য ফ্ল্যাটও তৈরি করা হবে।

বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় কিছু কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগী বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানে সুযোগ তৈরির উদ্যোগ থাকবে গ্রামীণ পর্যায়ে। এজন্য উজ্জীবিত করা হবে রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কারসহ গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের কর্মযজ্ঞকে।

এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। তবে বাজেট ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর নাগরিকদের নিকট মতামত চাইবে অর্থ মন্ত্রণালয়। মতামতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আগামী ২৩ জুনের পর যেকোনো একদিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন নিয়ে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা আগামী এক জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।

সবশেষ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। জুলাইয়ে নতুন অর্থবছর শুরুর পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এবার বাজেটের আকার সামান্য ছোট হয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় কমছে।

এই বাজেটে আয় ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আসবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা।

আর এনবিআর বহির্ভূত রাজস্ব ধরা হচ্ছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কর বহির্ভূত রাজস্ব আদায় ধরা হচ্ছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর এডিপির আকার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সবচেয়ে আলোচিত আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। আর এই ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার আশা ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। জিডিপি ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশের মানুষকে স্বস্তি দিতে মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

এছাড়া, উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকতে পারে, যার মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হতে পারে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.৫ শতাংশ ধরা হতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ গতকাল রোববার এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চলতি বাজেটের চেয়েও ছোট বাজেট দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছর সরকারি ব্যয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা চলতি বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

এ বিভাগের আরো খবর