বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে সংসদ ও সরকার গঠনের পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘একটি বাস্তবতা হলো, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান শুধু নির্বাচনের জন্য হয়নি।
‘আরেকটি রূঢ় বাস্তবতা হলো, পলাতক স্বৈরশাসক নির্বাচন ছাড়াই বার বার সরকার গঠন করে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন করে দেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। তাই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচন অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের ক্ষমতায়ন ও দেশের মালিকানা পুনরুদ্ধারের জন্য এই নির্বাচন জরুরি। রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঠেকাতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সংসদ পর্যন্ত সব জনপ্রতিনিধি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন।
‘বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সব নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।’
সংস্কারের প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই বলে উল্লেখ তারেক রহমান বলেন, ‘তবে সংস্কার প্রচেষ্টাকে কার্যকর করতে হলে আগে জনদুর্ভোগ লাঘব করতে হবে। ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসন প্রতিহত করতে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিগুলোর একতরফা পদক্ষেপ নিতে হবে।
‘জনগণ ভোটাধিকার পেলে তারা ফ্যাসিবাদী শক্তিকে নির্মূল করতে সক্ষম হবে। আর সেজন্য বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে- প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী শাসনামলে তা ধ্বংস হয়ে গেছে।
‘ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তাদের দোসররা যখন বাংলাদেশপন্থী শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তখন সাংবাদিকসহ সবার প্রতি সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তারেক রহমান তার বক্তব্যের শুরুতে জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নিহত ছয় সাংবাদিককে স্মরণ করেন এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শুধু রাজনীতিকরণের মাধ্যমে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেনি, ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকেও দমন করেছে।
‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব। বর্তমান সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
আওয়ামী লীগের প্রণীত একটি আইনের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘এটি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।’
দেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জামায়াতের এই নেতা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, া’আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল নয়, তাই গণতন্ত্র চর্চার কোনো অধিকার দলটির নেই।
‘নির্বাচনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে পরাস্ত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো এ লক্ষ্যে একটি কৌশল নির্ধারণ করতে পারি।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা দক্ষিণ সিটির আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ।