বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতার নতুন ফোনালাপ ভাইরাল

  • প্রতিনিধি, গাইবান্ধা   
  • ২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ২০:০৭

ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তোমাদের বাড়িঘরে যারা আগুন লাগিয়েছে তাদের বাড়িঘর নেই? সব কথা কি বলে দিতে হয়?’ যারা এখন বেশি বেশি বাড়াবাড়ি করছে তারা বেশি ভালো থাকবে না। ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখো, ওই শত্রুরা টেকে কি না!’

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার নতুন একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। ভারতে বসে ফোনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দু’মাস অপেক্ষা করে যার যা আছে তা নিয়ে তৈরি হওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সোমবার একটি ফোনালাপ ভাইরাল হয়। ফোনালাপে শেখ হাসিনার কণ্ঠের মতো একজনকে এই নির্দেশনা দিতে শোনা যায়।

ফোনালাপের অপর প্রান্তে ছিলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুল। একইদিন দুপুরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফোনালাপটি এই প্রতিবেদকের নজরে আসে।

ওই ফোনালাপের সূত্র ধরে রাজনৈতিক-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতে বসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখতে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। এছাড়া দলীয় নেতা-কর্মীদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতেও নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তোমাদের বাড়িঘরে যারা আগুন লাগিয়েছে তাদের বাড়িঘর নেই? সব কথা কি বলে দিতে হয়?’

শেখ হাসিনার কথার জবাবে ফোনের এ প্রান্ত থেকে শাকিল আলম বুলবুল বলেন, ‘জি নেত্রী, আলহামদুলিল্লাহ। আপনার কথায় আমরা ভরসা রাখছি।’

ফোনালাপে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এখন বেশি বেশি বাড়াবাড়ি করছে তারা বেশি ভালো থাকবে না। ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখো, ওই শত্রুরা টেকে কি না! কাউকে পালাতেও দেওয়া হবে না। যে কয়টা নাফরমানি করছে তাদের একটাও থাকবে না।’

এ সময় এ প্রান্ত থেকে ওই নেতা (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) বলেন, ‘জি নেত্রী, আলহামদুলিল্লাহ। আপনার কথায় আমরা ভরসা রাখছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একদম।’

ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা পরে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে বলেন, ‘আপনি একটু মাথা ঠাণ্ডা রেখে আপনার কৌশলে এগোন নেত্রী।’

উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক আছে, আমি সবাইকে বলছি। তোমরা শুধু দুই মাস অপেক্ষা করো। কিছু বলো না।’

জবাবে বুলবুল বলেন, ‘জি নেত্রী।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওরা ফেল করবে। আর আমরা যদি কিছু করি, তখন বলবে আমাদের জন্য করতে পারে নাই। সেটা আর বলার মুখ নেই। জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবেও ওই যে সুদখোর ইউনুসের গুটি গুটি চেহারা ধরা খেয়ে গেছে মানুষের কাছে।’

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘জি নেত্রী, অলরেডি বাংলার মানুষ বুঝে গেছে। মানুষ ভয়েতে মুখ খুলতে পারছে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এখন ওদের অভয় দিতে হবে। জবাবের জন্য প্রস্তুতি নাও।’

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘জি নেত্রী, ওই যে আমাদের গোবিন্দগঞ্জের কালাম ভাই এমপি আর আমি উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান, আর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ছিলাম পরপর দুইবার। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। উনার বাড়ি-গাড়ি সব জ্বালায় দিছে। আমারও বাড়ি-গাড়ি সব জ্বালায় দিছে নেত্রী। আমাদের অসংখ্য মামলা দিছে, আপনি শুধু আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘না আমি একটা কথা বলি, তোমাদের বাড়ি পোড়াই দিছে কে?’

বুলবুল বলেন, ‘ওরাই নেত্রী, জামায়াত-বিএনপি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের ঘর-বাড়ি নেই?’

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘জি, আছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাহলে, সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়?’

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘জি নেত্রী।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমাদের নাই, তাহলে কারো ঘর-বাড়ি থাকবে না।’

বুলবুল বলেন, ‘একটা সংশয় নেত্রী। মাননীয় নেত্রী, গোবিন্দগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সেক্রেটারি, তাদের নামে একটি মামলাও হয়নি। কিংবা তাদের বাড়ি-ঘরেও ওরা যায়নি!

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শোনো ওরা দেখে যেগুলি পটেনশিয়াল, যেগুলি দেখে একেবারেই শক্ত তাদের ওরা তালিকা করে। সবাইকে কাউন্ট করে না। সেজন্য বললাম, যাদের বাড়িঘর পোড়া গেছে, তাদের হিসাব নেওয়া হচ্ছে। কারা পোড়াতে আসছিল, আর আমার বাড়ি যদি পুড়ে তাদেরও পুড়বে।’

এপাশ থেকে বুলবুল বলেন, ‘জি নেত্রী, জি নেত্রী আলহামদুলিল্লাহ। আপনার সঙ্গে কথা বলে বুকটা ভরে গেল নেত্রী। আপনি ভালো থাকবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর মামলা, আমার তো শুধু গোবিন্দগঞ্জ না, আমার তো সারা বাংলাদেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। আমি বলছি, সবাই তালিকা করো। তোমরাও তালিকা করো। ২২৭ জনকে মার্ডারের লাইসেন্স পেয়ে গেছি। এক মামলায় যে শাস্তি, সোয়া ২০০ মামলায়ও সেই শাস্তি। তাই না? ঠিক আছে, সেই শাস্তি নেব। তার আগে সোয়া ২০০ হিসাব করে নেব। এটা যেন মাথায় থাকে।’

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, ইনশাআল্লাহ।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার একবার আসতে পারলে আর ডেভেলপ করব না। এবার করব সংস্কার। যার যা আছে তা নিয়ে তৈরি হও। এক মাঘে শীত যায় না। ডিসেম্বর পার হতে দেওয়া যাবে না।’

বুলবুল বলেন, ‘জি নেত্রী, আপনাকে দেশে আনার জন্য দরকার হলে জীবন দেব, পরিবারের সবার জীবন দেব।’

এই ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বুলবুল মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শাকিল আলম বুলবুল এবং সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ফোনালাপ প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ‘ওই ফোনালাপে মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুরে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। উস্কানির বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলার সব মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা পুলিশের দায়িত্ব। যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে পুলিশের নজরদারি রয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর