গত এক সপ্তাহের ভারি বর্ষণ ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় নেত্রকোণায় প্রায় ৫৭১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, টানা বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে সম্প্রতি নেত্রকোণার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা, বারহাট্টা ও নেত্রকোণা সদর উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এতে অন্তত ২৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।
গত মঙ্গলবার থেকে পানি কমতে শুরু হলেও এখনও বিভিন্ন রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আমন, শাকসবজির ক্ষেত ও ঘরবাড়িতে পানি রয়েছে।
বন্যার পানির কারণে ২১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রায় ২৮৫ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করলেও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ রয়ে গেছে। অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যার কারণে তাদের বাড়িঘর ভেঙেছিল। অনেকেই অর্থের অভাবে বাড়িঘর মেরামত করতে পারছে না।
বন্যাকবলিত এলাকার রাস্তাঘাট ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়েছে। তা দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নেত্রকোণার নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান জানান, গত এক সপ্তাহের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা, নেত্রকোণা সদর ও বারহাট্টা উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নে ফসল, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, অতি ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় নেত্রকোণা জেলার ৫ উপজেলায় ২৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমির রোপা আমন এবং ১৭৭ হেক্টর জমির শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩১৩ কোটি টাকা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নেত্রকোণার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, এলজিইডির আওতাধীন ৫ হাজার ৯৫৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১ হাজার ৬৩৮ কিলোমিটার পিচঢালা সড়ক। বাকিগুলো সিসি, আরসিসি, মেকাডম, কার্পেটিং ও কাঁচা সড়ক। সাম্প্রতিক বন্যায় নেত্রকোণার ২০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়, যার আনুমানিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।
নেত্রকোণা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহ্জাহান কবীর জানান, বন্যায় ১ হাজার ৭৩০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, যার আর্থিক মূল্য আনুমানিক ৭ কোটি ৮৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘জেলা সমন্বয় সভায় সব বিভাগকে সরেজমিনে গিয়ে বন্যায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র নিরূপণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রকৃত চিত্র হাতে আসলে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎস্যচাষিদের পুনর্বাসন এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দ্রুত মেরামত করে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচলের উপযোগী করব।
‘তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অর্থের বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হবে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে দ্রুত তা বাস্তবায়ন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব মিলিয়ে বন্যার পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। মানুষের দুর্ভোগ তো হচ্ছেই। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছি।
‘ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটসহ অন্য বিষয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা হবে।’