ঘুষ নিয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নিয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান বলেছেন, এ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘ভুয়া’।
আর্থিক লেনদেনের অভিযোগকে ‘মূল্যহীন’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন জ্যেষ্ঠ এ সচিব।
ডিসি নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়ে দৈনিক কালবেলায় ‘আমার টাকা-পয়সার প্রতি লোভ নেই, ৫ কোটি হলেই চলবে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় বৃহস্পতিবার।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘বেসামরিক প্রশাসনে নিয়োগ নিয়ে ভয়াবহ এক কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস হয়েছে। এর সঙ্গে খোদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এবং বিতর্কিত দুজন যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও আলী আযম সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য ফুটে উঠেছে। সেই সিনিয়র সচিবের সঙ্গে এক যুগ্ম সচিবের হোয়াটসঅ্যাপে সংবেদনশীল কথোপকথনে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে উঠে এসেছে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের তথ্যও।
‘যে কথোপকথনের কিছু স্ক্রিনশট রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহলেও ঘুরপাক খাচ্ছে, যা নিয়ে তোলপাড় চলছে খোদ প্রশাসনের ভেতরেও। এ কথোপকথনের অতি সংবেদনশীল কিছু অংশের স্ক্রিনশট কালবেলার হাতে এসেছে।’
কালবেলার প্রতিবেদনের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস সাংবাদিকদের জানান, প্রতিবেদনে যে স্ক্রিনশট প্রকাশ করা হয়েছে, তা আইফোনের। তিনি স্যামসাং ফোন ব্যবহার করেন।
তার ভাষ্য, ‘আমার মোবাইলটা হলো স্যামসাং। উনারা যেটা শো করেছেন, সেটা আইফোন। আইফোন কি আমি ব্যবহার করি? আমি ব্যবহার করি স্যামসাং।
‘কে কী দেখাল, উনাদের জিজ্ঞাসা করবেন। হোয়াট ওয়াজ দ্য ডায়ালগ (সেখানে কী কথোপকথন), আমি এটার কিছুই জানি না। আমি এটার সম্পর্কে...ইফ আই সে লেস, ইট ইজ বেটার (আমার কম বলাই উত্তম)।’
প্রকাশিত খবরের বিষয়ে সচিব আরও বলেন, ‘আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। সরকার যে টেলিফোন (মোবাইল ফোন) দিয়েছে, সেটাও আমি ব্যবহার করি না। আপনারা যারা জানেন, আমার আগের যে নম্বর, সেটাই আমি ব্যবহার করতেছি সরকারিভাবে।’
প্রতিবেদনের সত্যতা আছে কি না কিংবা এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পদত্যাগ করবেন কি না, এমন প্রম্নের উত্তরে মোখলেস বলেন, ‘আপনারা যদি নিউজ করতে চান, স্টান্টবাজি নিউজ করতে চান, তাহলে এ প্রশ্ন করতে পারেন।
‘এতদিন আমার সঙ্গে কাজ করেছেন, বিন্দু-বিসর্গ যেখানে সত্যতা নেই। এই প্রশ্ন করার আগে আপনারা নিজেকে প্রশ্ন করেন, কতটুকু যৌক্তিক হচ্ছে আমাকে এই প্রশ্ন করা।’
কালবেলায় এর আগে প্রকাশিত খবরের পরিপ্রেক্ষিতে নেয়া তিনটি পদক্ষেপ তুলে ধরে মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘ইতিমধ্যে তিনটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনটি চিঠি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে নামিয়ে নেবেন। তথ্য সচিবকে চিঠি লিখেছি। সেখানে এই পত্রিকাটির নাম আছে। ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরাসরি সরকারি চিঠি দেয়া হয়েছে।
‘এ ছাড়া অন্য যা নিয়মকানুন আছে, আপনারা আমার থেকে ভালো জানেন। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যাকে কেন্দ্র করে, অর্থাৎ ওই ভুয়া লোকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিবকে লেখা হয়েছে। এক-দুই দিনের মধ্যে তিনি গ্রেপ্তার হবেন। যে ব্যাংকারের অনভিজ্ঞতা বা ভুলের কারণে ব্যাংক অ্যাকাউন্টটা খোলা হয়েছিল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দেয়া হয়েছে এ ব্যাপারে।
‘শুধু উনার ব্যবস্থাই হবে না, অন্যান্য ব্যাংকেও যাতে এ রকম সমস্যা না হয়, সেই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’
‘আমি কি রাস্তার লোকের পেছনে দৌড়াব?’
কালবেলার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন কি না, জানতে চাওয়া হলে সচিব বলেন, ‘আমি প্রথমত বলব, যারা এটা করেছে, তাদের আমরা কতটুকু গুরুত্ব দিই। একটা রাস্তার লোক আমাকে অনেক কথা বলতে পারে। আমি কি রাস্তার লোকের পেছনে দৌড়াব? নেভার (কখনোই নয়)।
‘আমরা সরকারের পজিশনে থেকে জনগণের স্বার্থে কাজ করি। যেভাবে আছি, সেভাবেই কাজ করব যতদিন আল্লাহ হায়াতে রেখেছেন নিয়ম-কানুন মোতাবেক।’
দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সরকারের কাছে আহ্বান জানাবেন কি না জানতে চাইলে মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘অভিযোগটা যিনি করেছেন এই অভিযোগকারী আমার কাছে কোনো বিবেচনায় নেই। এই অভিযোগটি আমি মূল্যহীন মনে করি। এটা ভুয়া নিউজ।’