ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় বকেয়া পাওনার দাবিতে সোমবার থেকে ২৪ ঘণ্টা ধরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
এ অবরোধের কারণে তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়কটিতে চলাচলরতরা।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় অবস্থান নেন স্থানীয় বার্ডস গার্মেন্টসের শ্রমিকরা। পরে রাত ১২টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকরা কিছু সময়ের জন্য সড়ক থেকে সরে যাওয়ার পর আবারও অবস্থান নেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের ভাষ্য, গত ২৭ আগস্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়, কিন্তু মালিকপক্ষ তাদের অন্য কারখানা ঠিকমতো চালালেও শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করেনি। বিজিএমইএ, সরকার ও মালিকপক্ষ বৈঠকের পর সোমবার শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধের কথা থাকলেও তা করে নাই। নিরুপায় হয়ে গতকাল সকাল থেকে কারখানার শ্রমিক ও স্টাফরা বাইপাইলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
শ্রমিকদের একজন বলেন, ‘সারা রাত সড়কেই অবস্থান করেছি আমরা। এখনও সড়কেই আছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়ক থেকে আমরা সড়ক থেকে যাব না।’ এদিকে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি শ্রমিক আন্দোলনের কারণে ২৪ ঘণ্টা ধরে বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন সড়কটিতে চলাচলরতরা।
দূরপাল্লার বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ অসংখ্য যানবাহন আটকে যায় মহাসড়কটির কয়েক কিলোমিটার এলাকায়। এর প্রভাবে আশপাশের ঢাকা-আরিচা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড দুটির মহাসড়কেও যানজট ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ।
ডিইপিজেডের একটি কারখানার এক শ্রমিক বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় অফিস ছুটির পর ওই রাস্তায় যানজটের কারণে অনেক সময় লাগছে বাসায় ফিরতে। আজ ভোরে গার্মেন্টসে যাওয়ার সময়ও রাস্তাটি বন্ধ থাকায় সবাই অনেক বিপদে পড়েছে।
‘অনেকে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে আবার অনেকে উল্টোপথে রিকশায় কারখানায় গেছে। শ্রমিকদের বিষয়টা চিন্তা করে সরকারের এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। না হলে কত মানুষ এভাবে যানজটে কষ্ট পাচ্ছে।’
সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ইয়াসিমন আহমেদ বলে, ‘সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ এলাকা থেকে কোনো বাস পাইনি। পরে অনেক সময় অপেক্ষার পর দ্বিগুণ ভাড়ায় রিকশায় করে স্কুলে গেছি। গতকাল থেকেই আমাদের এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কটিতে অনেক গাড়ি দাড়ি আছে। ‘মহাসড়কটি এভাবে দীর্ঘসময় আটকে রাখা হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।’
রংপুরগামী একটি পণ্যবাহী ট্রাকের চালক লিটন মিয়া বলেন, ‘সোমবার মধ্যরাতে রাজধানী থেকে ট্রাক নিয়ে রওনা হয়েছি, কিন্তু সারা রাত পার হয়ে সকাল হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বাইপাইল পার হতে পারিনি।
‘ঈদের সময়ও টানা এত সময় যানজটে কখনও পড়িনি। পরে জানতে পারলাম, গার্মেন্টসের শ্রমিকরা রাস্তা আটকে রেখে গতকাল থেকে আন্দোলন করছে। এভাবে এত সময় রাস্তা আটকে রেখে আন্দোলনের কারণে আমরা যারা সাধারণ মানুষ আছি, তারা অনেক ভোগান্তিতে পড়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকরা হয়তো বাধ্য হয়ে রাস্তা আটকে রাখছে, কিন্তু তাদের ভাবা উচিত কত মানুষ এর জন্য কষ্ট করছে।’
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ূব আলী বলেন, ‘গতকাল থেকে বাইপাইলে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক বন্ধ করে পাওনার জন্য আন্দোলন করছে শ্রমিকরা। এতে সড়কটিতে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে৷
‘নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল থেকে নবীনগর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কে যানজট। এ ছাড়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিশমাইল থেকে নবীনগর পর্যন্তও তিন কিলোমিটারজুড়ে যানজট ছড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের কোনোভাবেই বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানো যাচ্ছে না। পাওনা টাকা না পেলে তারা সড়ক ছাড়বে না।’