হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন মিজানুর রহমান। তীব্র বুক ব্যথা নিয়েই কয়েকদিন অফিস করেন। কিন্তু আর পারছিলেন না। চিকিৎসার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি চান। কিন্তু ছুটি পাননি মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এই অফিস সহায়ক। উল্টো তাকে অপদস্থ করা হয়।
অবশেষে চিরদিনের ছুটি নিয়ে চলে গেলেন ওপারে। বুধবার অসুস্থ শরীর নিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
মিজানুর রহমান গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের বেরু মোল্লাকান্দি গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
খবর নিয়ে জানা যায়, ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত মিজান তিন সন্তানের জনক। আট বছর বয়সী ছেলে মামুন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। দুই মেয়ের মধ্যে মীমের বয়স ছয় ও সাবিহার বয়স তিন বছর।
গত প্রায় ১৬ বছর ধরে তিনি মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ে গজারিয়া আমলী আদালতে অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার ছুটিতে থাকায় বর্তমানে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এই কোর্টের বিচার কাজ পরিচালনা করছেন।
সম্প্রতি মিজানের হার্টে সমস্যা ধরা পড়ে। গত কয়েকদিন ধরে তিনি বুক ব্যথায় ভুগছিলেন। গত রোববার থেকে বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করায় তিনি একাধিকবার ছুটি চাইলেও তাকে ছুটি না দিয়ে উল্টো ভর্ৎসনা করা হয়।
মিজানুর রহমানের স্ত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, ‘আমার স্বামী গত কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। পরশু থেকে তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি তাকে ছুটি নেয়ার জন্য বলি। অসুস্থতার কারণে তিনি গতকাল (মঙ্গলবার) অফিসে যেতে কিছুটা দেরি করেন। এ কারণে তাকে অফিসের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
‘এখানেই শেষ নয়, স্যার তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে আটতলা থেকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেয়ার কথা বলে। চামড়া ছিলে লবণ লাগিয়ে দেয়ার মতো হুমকিও দেয়া হয়। অসুস্থ হলেও ছুটি দেয়া হবে না জানিয়ে অসুস্থ শরীর নিয়ে অফিস করতে হবে বলে তাকে জানানো হয়। আজ আমার স্বামী অফিসে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে রাস্তায়ই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।’
মিজানের বড় ভাই আলী আহম্মদ বলেন, ‘আমার ছোট ভাইয়ের হার্টের সমস্যা ছিল। গত রোববার থেকে সে বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করছিল। অসুস্থ শরীর নিয়ে দুদিন অফিস করার পর মঙ্গলবার সে ডাক্তার দেখানোর জন্য ছুটি চায়। তবে কাজের চাপ থাকার কারণে তাকে ছুটি দেয়া যাবে না বলে জানানো হয়।
‘চিকিৎসা করলে আমার ভাই হয়তো বেঁচে থাকত। সিনিয়র কর্মকর্তাদের অমানবিক আচরণের কারণে আমার ভাইকে অকালে চলে যেতে হলো।’
বিষয়টি সম্পর্কে টঙ্গীবাড়ী থানা আমলী আদালতের বেঞ্চ সহকারী রুবেল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় আজ সকাল ১০টা থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। আমরা কথাবার্তা বলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।’