বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নানান ঝুঁকিতে উখিয়া টেকনাফ ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শিশুরা

  • টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি   
  • ২৫ আগস্ট, ২০২৫ ১৬:৩৩

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ভয়াবহ শিক্ষা সংকট তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় তহবিল সংকটের কারণে ক্যাম্পভিত্তিক লার্নিং সেন্টার বা অস্থায়ী স্কুলগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে লাখ লাখ শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে, যা শুধু মানবিক সংকট নয়, বরং ভবিষ্যতে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

৮ বছরের বাস্তুচ্যুতি, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ:

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর দমন-নিপীড়নের মুখে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। গত সোমবার সেই ভয়াবহ বাস্তুচ্যুতির ৮ বছর পূর্ণ হলো। এর মধ্যে একাধিকবার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও, রাখাইন রাজ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে রয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রায় অর্ধেকই শিশু। তাদের জন্য অস্থায়ী শিক্ষাকেন্দ্র চালু করা হয়েছিল, যাতে অন্তত প্রাথমিক শিক্ষা ও ন্যূনতম সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তহবিল সংকটের কারণে কেবল কক্সবাজারেই ২ লাখের বেশি শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক রেসকিউ কমিটি (আইআরসি) জানিয়েছে, বর্তমানে ১২ বছরের কম বয়সি কোনো রোহিঙ্গা শিশু পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে শিশুরা সারাদিন ঘোরাফেরা করছে ক্যাম্পের ভেতর ও বাইরে। অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে শ্রম, মাদক, জুয়া বা অন্যান্য অপরাধে। কেউ আবার পাচারের শিকার হচ্ছে। এভাবে পুরো একটি প্রজন্ম ধীরে ধীরে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা নূর বেগম (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমার মেয়েটা যখন স্কুলে যেত তখন অন্তত নিরাপদ থাকত। এখন সারাদিন ঘরে বসে থাকে বা বাইরে ঘুরে বেড়ায়। আমি সবসময় আতঙ্কে থাকি, যদি কোনো খারাপ কিছু ঘটে যায়।’

শিশু আবদু রহিম বলেন, ‘আগে আমিও আমার বন্ধুরা একসঙ্গে পড়াশোনা করতাম। এখন কেউ কাজ করছে, কেউ দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে, আবার কেউ পাচারের শিকার হচ্ছে। যদি স্কুল খোলা থাকত, এসব বিপদে পড়তে হতো না।’

একজন রোহিঙ্গা মা জানালেন, ‘স্কুল বন্ধ থাকায় মেয়েরা ঘরে বসে থাকে। তাই অনেক সময় অল্প বয়সেই বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি। মিয়ানমারে সন্তানদের পড়াতে পারিনি, এখানে সুযোগ পেলেও এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুরা দীর্ঘসময় অনিশ্চিত পরিবেশে ঘোরাফেরা করছে। এতে তারা পাচারকারী ও অপরাধী চক্রের সহজ টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। বিভিন্ন এনজিওর পর্যবেক্ষণ বলছে, কিশোরী মেয়েদের যৌন হয়রানি, জোরপূর্বক বিয়ে এবং পাচারের ঘটনা বাড়ছে।

রোহিঙ্গা নেতা জুবায়ের বলেন, লার্নিং সেন্টারগুলো খোলা থাকলে আমরা শিশুদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতাম। এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এতে শুধু শিশুরা নয়, পুরো ক্যাম্পই ঝুঁকিতে পড়ছে।

রোহিঙ্গা শিক্ষক মো. সেলিম বলেন, ‘শিক্ষা শুধু পড়াশোনার জন্য নয়, শিশুদের সুরক্ষার জন্যও দরকার। স্কুল থাকলে অন্তত তারা কয়েক ঘণ্টা নিরাপদে কাটাতে পারত। এখন তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, যা তাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিচ্ছে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষা বঞ্চিত রোহিঙ্গা প্রজন্ম শুধু মানবিক সংকটই নয়, ভবিষ্যতে পুরো অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। শিক্ষাহীন হয়ে তারা আরও বেশি অপরাধী চক্রে জড়িয়ে পড়বে, যা দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।

রোহিঙ্গা শিশুরা বারবার দাবি করছে, তাদের স্কুলগুলো আবার চালু করা হোক।

‘আমরা পড়াশোনায় ফিরতে চাই। আমাদের স্বপ্ন অন্ধকারে হারাক, তা চাই না- বলছে শিশুরা।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

রোহিঙ্গা সংকট মেকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় টেকসই সমাধানের পথ খুঁজতে গতকাল রোববার বিকাল কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী সেনাবাহিনীর হোটেল বে-ওয়াচ মিলনায়তনে আয়োজিত তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে।

সম্মেলনের প্রথম দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শত নারী-পুরুষকে নিয়েসে আনা হয়েছে সেখানে। আগত অতিথিরা এসব রোহিঙ্গাদের মতামত গ্রহণ করছেন। মূল স্বদেশ ফেরতে রোহিঙ্গা ভাবনা নিয়ে শোনা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ভাবনা।

সম্মেলনের অভ্যন্তরে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশ অনুমতি না থাকলেও দায়িত্বশীল একটি সূত্রে বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। যেখানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমানসহ দেশি-বিদেশিরা অংশ নিচ্ছেন। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ১০৭ দেশের সমন্বয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই সম্মেলনের প্রস্তুতি স্বরূপ কক্সবাজারের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনে ৪০টি দেশের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।

এ বিভাগের আরো খবর