বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঐতিহ্যবাহী ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মঙ্গলবার সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১৫০ জন আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষের সময় দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারটি বাস ভাঙচুর করা হয়।
সংঘর্ষে আহত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন।
সংঘর্ষের সূত্রপাত যেভাবে
গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ চলে বুধবার ভোর প্রায় পাঁচটা পর্যন্ত। পরে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা সমঝোতা স্বাক্ষর করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে নগরের বটতলা এলাকায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের মারধরের মাধ্যমে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে ভিডিও ধারণ করে বিএম কলেজের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং রাত ১১টার দিকে ওই দুই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাস নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পথে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর বাসে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর করেন। এতে বাসে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ শিক্ষার্থী আহত হয়ে শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
বাসে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের হামালর ঘটনা শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা আরও দুটি বাস নিয়ে বিএম কলেজ অভিমুখে যাত্রা করেন। এরপর রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শত শিক্ষার্থী বিএম কলেজ এলাকায় অবস্থান নেন।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে দুই পক্ষের মধ্য দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়ে শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জনের মতো শিক্ষার্থীকে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা জিম্মি করে রাখেন বলেও খবরও পাওয়া যায়।
এর আগে সোমবার রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাসনুভা চৌধুরী জোয়ার পারিবারিক বিরোধপূর্ণ চলমান একটি জমির মামলার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে দুই নারীকে হেনস্তা করেন বিএম কলেজের সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান রাফিসহ ১৫ থেকে ২০ জন। ঘটনা শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের মারামারি হয়।
জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মারামারির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করেন।
শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়ে মারধর করেছে এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাদের ভাইদের নির্মমভাবে আহত করেছে।
‘বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতে আমাদের শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ব্যাপক মারধর করেন। পরে প্রশাসনের সাহায়তায় আমাদের উদ্ধার করা হয়।’
বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, মামলা চলমান একটি জমির বিষয়ে সালিশ করতে গেলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের মারামারি হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বিএম কলেজে এসে হামলা চালিয়ে প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থীকে আহত করেন।
শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮২ জনকে ভর্তি নেয়া হয়েছে, যাদের অবস্থা গুরুতর নয়।
বিএম কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল হক জানান, তিনটি বাস, প্রশাসনিক ভবন, হোস্টেল ও কলেজের বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর করা হয়। কতজন ছাত্র আহত হন, সে বিষয়ে জানা যায়নি।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সেনা সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুলিশ সদস্যরা সঙ্গে ছিলেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দীন জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিএম কলেজে ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।