সারাদেশের তীব্র বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেই ফারাক্কা বাধের গেট খুলে দেয়ার খবরে নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে রাজশাহী অঞ্চলে। সাধারণ মানুষ জানান, তারা আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পদ্মা নদীর পানি এখনও বিপদ সীমার প্রায় পৌনে দুই মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী পাঁচদিনের মধ্যে বন্যার আশঙ্কা নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা অববাহিকা অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে বন্যা এবং শুষ্ক মৌসুমে খরা বাংলাদেশের জন্য নিত্য বছরের চিত্র হয়ে উঠেছে।
পদ্মা নদীর উজানে ভারতীয় অংশে ধারণ ক্ষমতা ৪০ হাজার কিউসেকের অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধির কারণে ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে পদ্মা নদী দিয়ে বাংলাদেশ অংশে প্রতি সেকেন্ড প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ কিউসেক পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না জানালেও রাজশাহী ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তারা বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আতঙ্কের কথা জানান।
ফুদকি পাড়ার বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, ‘পানি বাড়ার কারণে বন্যা হয় কিনা সেই ভয়ে আছি। বন্যা হলে বাড়িঘরে পানি ওঠে। চরের ফসল ডুবে যায়। বন্যা যেন না হয় সে দোয়াই করি। একই রকম প্রতিক্রিয়া জানান অন্য অনেকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘পদ্মা নদীর পানি এখনও বিপদসীমার প্রায় পৌনে দুই মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী পাঁচদিনের মধ্যে বন্যার আশঙ্কা নেই।
‘মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীর বোয়ালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ১৬ দশমিক ৩০ মিটার। এখানে বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫ মিটার। কুষ্টিয়ায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ পরিমাপ করা হয়েছে। সেখানে প্রতি সেকেন্ডে ১৩ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোনোভাবে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সে বিষয়েও পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে। নদী ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগসহ অন্যান্য সরঞ্জাম পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুদ রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা অববাহিকা অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে বন্যা এবং শুষ্ক মৌসুমে খরার আতঙ্কে ভুগতে হয়। এই বাঁধের কারণে আমাদের নদ-নদীগুলোও সংকীর্ণ হচ্ছে। ফলে একটু বাড়তি পানি এলে সেগুলো আর পানি ধারণ করতে পারে না। এ কারণে খুব কম পানিপ্রবাহেও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’
সাধারণ মানুষের প্রতাশা, প্রতিবেশী দুই দেশ পানির সুষ্ঠু বণ্টন ও দুর্যোগ মোকাবেলায় ন্যায্যতার ভিত্তিতে কাজ করবে।