বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মিছিলে নির্বিচার গুলিবর্ষণে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মুদি দোকানি আবু সায়েদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে চারদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। এছাড়া সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালত এই রিমান্ডের আদেশ দেয়।
এদিন মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে দীপু মনি ও আরিফ খান জয়কে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন।
এর আগে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে তাদেরকে হাজির করা হয়। তাদের সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানিকালে তাদের এজলাসে তোলা হয়।
দীপু মনিকে সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানের বারিধারা ডিওএইচএস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি গুলশান বিভাগের একটি দল। তার বিরুদ্ধে চাঁদপুর ও ঢাকায় মামলা রয়েছে। ওই রাতেই তাকে মোহাম্মদপুর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
অন্যদিকে ধানমণ্ডি এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরিফ খান জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ১৪ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী আল ফারাবী মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ দিন ধার্য করেন।
গত ১৩ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে এস এম আমীর হামজা নামে এক ব্যক্তি আবু সায়েদ হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তা এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে মোহাম্মদপুর থানাকে নির্দেশ দেয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন-অর-রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে ১৯ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে মোহাম্মদপুর থানার বছিলায় ৪০ ফিট চৌরাস্তায় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ নিহত হন।
গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এটিই ছিল প্রথম মামলা।
মামলার বাদী আদাবর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী এস এম আমীর হামজা। তিনি সচেতন নাগরিক হিসেবে একজন নিরীহ নাগরিক হত্যার বিচার চেয়ে এ মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মিছিল সমাবেশ করেন। ওইসব শান্তিপূর্ণ মিছিলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। এতে বহু ছাত্র-জনতা হতাহত হন।
গত ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরের বছিলার ৪০ ফিট এলাকায় ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশ করছিলেন। সেখানেও পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। রাস্তা পার হওয়ার সময় স্থানীয় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।