কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে শিক্ষার্থী হত্যা, তাদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে শনিবার সমাবেশ করেছেন অভিভাবকরা।
সকাল ১০টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘সন্তানের পাশে অভিভাবক’ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
সমাবেশে চঞ্চল চৌধুরী নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘এখন দেশে দিনে নাটক আর রাতে আটক চলছে। আমি একজন শিক্ষক। আমার ৯ বছরের একটি সন্তান আছে। আমার প্রতিটি রাত নির্ঘুম কাটে। কখন আমাকে নিয়ে যাবে বা আমার ছেলেকে নিয়ে যাবে, এই চিন্তায় আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না।
‘এই আতঙ্কের মধ্য দিয়ে আমাদের প্রতিটি দিন অতিবাহিত হচ্ছে, কিন্তু সরকারের কোনো মন্ত্রী মিথ্যাচার ছাড়া আর কোনো কথা বলছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি খুনির কাছে কোনো খুনের বিচার চাই না। আমরা এই খুনির অপসারণ না হয় পদত্যাগ চাই। আমি সব অভিভাবক এবং জনতাকে আহ্বান করছি আপনারা রাস্তায় নেমে আসুন। আপনার নিজেদের বাঁচান, নিজেদের দেশকে বাঁচান।
‘গত জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত যা যা হচ্ছে সেটি কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।’
নাসিমা নামে আরেক অভিভাবক বলেন, ‘মা হিসেবে আমাদের কর্তব্য ছিল সন্তানদের খাইয়ে পড়িয়ে বড় করা। আমরা সেটা করেছি। কর্তব্য ছিল মানুষের মতো মানুষ করা। সেটিও করেছি আমরা।
‘এখন যখন আমাদের সন্তানরা রাস্তায় নেমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে, তখন আমাদের কর্তব্য, তাদের সেই প্রতিবাদে পাশে থাকা। আমরা বর্তমানে সেটি করছি।’
এ নারী আরও বলেন, ‘আজকে যেসব অভিভাবক ভয়ের কারণে রাস্তায় নামতে পারছেন না, আপনার বাসায় থাকুন, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আপনারা বাসায় বসে দেশের অবস্থা বাইরের মানুষকে জানান।
‘আমাদের উপকার করতে পারছেন না ঠিক আছে, কিন্তু অপকার করিয়েন না। আপনার মুখ বন্ধ করে থাকাটাই আমাদের জন্য অপকার।’
এসএসসি পরীক্ষার্থী মোবারক হোসেনের মা বলেন, ‘আমার পোলাডা আরেকজনরে বাঁচাইতে গিয়া নিজে দুই পায়ে গুলি খাইয়া পইড়া রইছে। আমার পোলা যখন হাসপাতালের বেডে কান্দে, তখন আমার কইলজাটা ফাইট্টা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার সন্তানের এক পা ভাঙা, গুড়া গুড়া হয়া গেছে। আরেক পায়ের গোশত ফুটা হয়া বাইর হয়া গেছে। এহন আমার পোলা হাটতে পারব কী পারব না, তাও কইতে পারি না।
‘আমার পোলার হাসপাতালের বেডে শুইয়া কান্না আমি সহ্য করতে পারি না। আমি এই সন্তান নিয়া এহন কী করমু? কার কাছে যামু? আমার তো এমন কোনো লোকও নাই যে, আমারে সাহায্য করবে।’
এ আয়োজনের অন্যতম সমন্বয়ক রাখাল রাহা বলেন, ‘আমাদের দুই শতাধিক সন্তান-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সন্তান আহত হয়েছে কয়েক হাজার। আটক করা হচ্ছে তার চেয়েও বেশি।
‘মামলা দেয়া হচ্ছে তারও অনেক বেশি। তার মানে লক্ষ লক্ষ সন্তান, মানুষের জীবন আজ হুমকির মুখে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে থেকে আমাদের সন্তানদের যে কর্মসূচি, আমাদেরও একই কর্মসূচি। সন্তানরা যখন যে কর্মসূচি দেবে, আমরা সারা দেশে এই ব্যানার নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াব। তাদের সহযোগিতা করব।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আমাদের বুকের রক্ত না নিয়ে আর আমাদের সন্তানদের রক্ত নিতে পারবে না।’