দেশের গোয়েন্দা শাখা কর্তৃক শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে আটকে রাখাকে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। শুধু তাই নয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের অবৈধভাবে তুলে নিয়ে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আটকে রাখা ও কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা পড়তে বাধ্য করানোর ঘটনা নিরেট মিথ্যাচার ও প্রতারণার উদাহরণ হিসেবে দেখছে সংস্থাটি।
সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করে এসব বন্ধের জোর দাবি জানায় টিআইবি। সংস্থাটি বলছে, শিক্ষার্থীদের আটকে রেখে সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করা হয়েছে।
বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিপুল প্রাণহানি, বাছবিচারহীন মামলা ও ধরপাকড়ের মতো ঘটনাগুলোকে বৈধতা দিতে সরকার, ক্ষমতাসীন দল ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে।’
পাশাপাশি গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যক্রমকে মিথ্যাচার, গণবিরোধী ও নিমর্ম নাটকীয়তাপূর্ণ উল্লেখ করে তা সবাইকে উপলদ্ধি করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে টিআইবি বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দুই শতাধিক মামলায় দুই লাখ ১৩ হাজারের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছে বলেও মনে করে টিআইবি।
সংঘর্ষ কিংবা সহিংসতার সঙ্গে কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই এমন ব্যক্তিদেরও হয়রানির অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গ্রেপ্তার অভিযানে শুধু সহিংসতায় জড়িতদের কথা থাকলেও গণমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পারছি যে শিক্ষার্থী, পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এমনকি ১৩ থেকে ১৭ বছরের কিশোরকেও হাতকড়া পরিয়ে আদালতে তোলার ঘটনা ঘটেছে, যা সংবিধানে দেয়া নাগরিক অধিকারের পরিপূর্ণ লঙ্ঘন।’
বিবৃতিতে টিআইবি অভিযোগ করে বলেছে, উচ্চ আদালতের নিদের্শনা উপেক্ষা করে রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আইনের রক্ষক হিসেবে নিজেদের পরিচয়ের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা থাকলে ভক্ষকের পথ থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ নাগরিককে হয়রানি করা বন্ধ করুন, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নিপীড়ন বন্ধ করুন।’
নিরাপত্তা প্রদানের নামে কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নেয়ার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে গিয়ে মূলত চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। গোয়েন্দা শাখা মিথ্যাচার করছে, জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে এবং নিজেদের পেশাগত দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিচ্ছে।’
নিরাপত্তা হেফাজতের কোনো আইনি ভিত্তি নেই উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আটকে রাখা সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একইভাবে সমন্বয়কদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা পড়তে বাধ্য করা সংবিধানের ৩৫(৪) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। আন্দোলন দমনে নজিরবিহীন বলপ্রয়োগের ঘটনা ঢাকতে এমন অসাংবিধানিক প্রচেষ্টার আশ্রয় নিয়েছে- এমন ধারণা হওয়াটা মোটেও অমূলক নয়।’
এছাড়া আন্দোলন ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধ রাখার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে বিবৃতিতে। টিআইবির অভিযোগ, আন্দোলনটি অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ হলেও তা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
পাশাপাশি এখনই মামলা প্রত্যাহার, ব্লক রেইড বন্ধসহ সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করার জোর দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।