অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) প্রবেশে বুধবার ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করেছে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
দুপুর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে বিবৃতি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ফেসবুক ওয়ালে ও শাবিপ্রবির বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা হয়।
এ বিবৃতিতে ‘মুহম্মদ জাফর ইকবালকে শাবিপ্রবিতে আজীবন নিষিদ্ধ করা হলো’ বলে উল্লেখ করা হয়।
জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল শাবিপ্রবির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তার স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হকও শাবিপ্রবির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে মঙ্গলবার একটি নিবন্ধ লেখেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ নিবন্ধের একটি ছোট অংশ ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এ নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়।
সকালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া ৩টার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় হল ছাড়ার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ সিদ্ধান্ত ছড়িয়ে পড়ার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তারা হল ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আন্দোলরত ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’দের নামে একটি বিবৃতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
‘বিউটি অব সাস্ট ক্যাম্পাস’ নামে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা ওই বিবৃতিতে উল্লেখ রয়েছে, “রেজিঃ ভবন, কন্ট্রোলার এবং ভিসি ভবন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও আজ (বুধবার) বিকেল ৩টার মধ্যে সকল শিক্ষক ও কর্মকর্তা/কর্মচারীকে তাদের কোয়ার্টার ত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
‘পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে। পাশাপাশি জনাব. ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে শাবিপ্রবিতে আজীবন নিষিদ্ধ করা হলো- সাধারণ শিক্ষার্থী, শাবিপ্রবি’।”এ বিষয়ে শাবিপ্রবির আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হঠাৎ করেই আমাদের হল ছাড়ার নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনার প্রতিবাদেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস কক্ষগুলো বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছি।’তিনি বলেন, ‘মুহম্মদ জাফর ইকবালকে আমরা খুব শ্রদ্ধা করতাম, কিন্তু তার গতকালের লেখাটি আমাদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।
‘শিক্ষার্থীরা যখন খুন হচ্ছে, হামলার শিকার হচ্ছে তখন একজন শিক্ষক হয়ে তিনি এ ধরনের লেখা লিখতে পারেন না। তাই আমরা তাকে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে আজীবনের জন্যে নিষিদ্ধ করেছি।’বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে মঙ্গলবার সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য শাবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয় বলে জানান রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান।
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকার পাশাপাশি হলও বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বুধবার বিকেল ৩টার মধ্যে সব হল থেকে শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ চলমান থাকায় অফিস খোলা থাকবে।