মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা যমুনাবাদ-বাস্তা এলাকার খালের ওপর দুই কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আরসিসি ইনভার্টার গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই দেবে গেছে সেতুটি। বাকা হয়ে গেছে গার্ডার।
চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর শিবালয় উপজেলা প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে মের্সাস ফরমিলা আকতার নামের ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। কিন্তু নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী আর শ্রমিকদের অদক্ষতার কারণে সেতুর পাইলিং ও শাটারিংয়ে ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ত্রুটির মধ্যেই ঢালাই দিলে সেতুর গার্ডার মাঝখানে দেবে বাঁকা হয়ে যায়। আর সেই দেবে যাওয়া বাঁকা গার্ডারের ওপরই সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছে। সেতুটির নির্মাণ কাজে রডের পরিমাণেও ত্রুটির অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে সেতুটির উচ্চতা কম হওয়ায় এর নিচ দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। এমনকি বর্ষার সময় পানির স্তর সেতুটি ছুঁয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে গার্ডার দেবে যাওয়ায় সেতুতে ময়লা-আবর্জনা আটকে জনভোগান্তির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বাস্তা এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সাহেদ আলী বলেন, ‘সেতুর পাইলিংয়ের সময় সমস্যা দেখা দেয়। তখন ঠিকাদারের লোকজনকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। পরে ঢালাইয়ের শেষে দেখা যায়, সেতু নিচের দিকে বাঁকা হয়ে গেছে। তাছাড়া সেতুটি রাস্তা থেকেও নিচু হয়েছে। সেতুটি কমপক্ষে আরও তিন ফুট উঁচু করা দরকার ছিল।’
বাস্তা এলাকার মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণের সময় অনিয়ম দেখে সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি কামনায় ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করি। কারণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে বলে-কয়ে কোনো লাভ হয়নি। ওদিকে সেতুর নির্মাণ কাজে অনিয়মের ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করায় স্থানীয় প্রভাবশালীদেরও বিরাগভাজন হতে হয়েছে।’
স্থানীয় সিকিম আলী বলেন, এমনিতেই সেতুটির উচ্চতা কম হয়েছে। তার ওপর নিচের দিকে বাঁকা হয়ে গেছে। নদীতে আর দু-তিন হাত পানি বাড়লেই সেতু ছুঁয়ে যাবে। আর বর্ষার সময় সেতুতে উজানের কচুরিপানাসহ সব আবর্জনা আটকে যাবে। তখন তো আমরা এলাকায় বসবাস করতে পারব না।
‘এখন যে অবস্থা দেখছি, তাতে তো মনে হয় সেতু না হওয়াই ভালো ছিল। ঠিকাদার প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সেতু নির্মাণে এই অনিয়ম করেছেন।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী তপন কুমারের দাবি, ‘সেতু নির্মাণে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। তবে পাইলিংয়ের পর শাটারিংয়ে সমস্যার কারণে সেতুর গার্ডার দেবে বাঁকা হয়ে গেছে। এতে কোনো সমস্যা হবে না। এসব বিষয়ে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার স্যার অবগত আছেন। ইঞ্জিনিয়ার স্যার যেভাবে বলবেন সেভাবেই সেতুর কাজ করা হবে।’
শিবালয় উপজেলা প্রকৌশলী মোবারক হোসেন বলেন, ‘গার্ডার নিচু ও বাঁকা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের কাজে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।
তবে নদীতে পানি বাড়লে বা বর্ষা হলেও মানুষের কোনো সমস্যা হবে না। কারণ ফ্লাড লেভেল থেকে সেতুটি তিন ফুট উঁচু রাখা হয়েছে। তাছাড়া এখান দিয়ে বড় ধরনের বা জরুরি কোনো নৌযান চলাচল করে না।’
ইতোমধ্যে সেতুটি নির্মাণ কাজের ৭০ ভাগ শেষ হয়ে গেছে বলে জানান এই প্রকৌশলী।