বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাইবান্ধার কোটি টাকার মরিচের হাট, নেই নিজস্ব ঠিকানা!

  • মাসুম বিল্লাহ, গাইবান্ধা   
  • ১৮ জুন, ২০২৫ ১৭:০৭

সাদা বস্তায় টকটকে লাল মরিচ, এই দৃশ্য এখন গাইবান্ধার ফুলছড়ি হাটের চেনা রূপ। দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় মরিচের পাইকারি হাট এটি। জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের পুরাতণ হেডকোয়ার্টার এলাকায় বসে ওই ঐতিহ্যবাহী হাট। প্রতি সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে কোটি টাকার বেচা-কেনা। তবে এই হাটের নেই নিজস্ব কোন জায়গা। হাট বসে ব্যক্তি মালিকানাধীন ভাড়া করা জায়গায়।

সংশ্লিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানায়, ‘গাইবান্ধার সদর, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলার ১৬৫টি চরে উল্লেখযোগ্য হারে চাষ হয় লাল মরিচের। এসব চরের উৎপাদিত শুকনা মরিচই বেচা-কেনা হয় এই হাটে। স্থানীয় ব্যবসায়ি ছাড়াও জামালপুর, নওগাঁ, রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর ও রাজধানী ঢাকা সহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে মরিচ কিনতে আসেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া দেশের নামকরা প্যাকেটজাত খাদ্যপ্রস্তুত কোম্পানির প্রতিনিধিরাও এ হাট থেকে নিয়মিতভাবে মরিচ সংগ্রহ করে থাকেন।

গতকাল মঙ্গলবার দেখা যায়, ‘ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের ঘাটে দ্রুত গতিতে একের পর এক ছুটে আসছে নানা আকারের নৌকা। প্রতিটি নৌকায় বোঝাই করা রয়েছে সাদা বস্তা, যার ভেতরে ঠাসা লাল মরিচ। নৌকাগুলোর সঙ্গে আছে মানুষ- কেউ চালক, কেউ বা সহকারি, সবাই ব্যস্ত নিজেদের কাজে। এ সময় নদী যেন একটি ভাসমান জীবনে পরিণত হয়। যেখানে এক মুহূর্তের জন্যও জীবনের গতি থেমে নেই। হাটের দিন ভোর বেলা থেকেই নদীর ঘাটে এমন ব্যস্ততা চোখে পড়ে। ঘাটে নৌকা ভিড়লে ঘাটজুড়ে উৎসবমূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

নৌকা ঘাট থেকে মরিচের হাটে যেতে নদী পথ পাড়ি দিতে হয় প্রায় আধা কিলোমিটার। কোন কোন সময়ে আরও বেশি। নৌকা থেকে নেমেই চরাঞ্চলের কৃষকরা ছুটে চলেন হাটের দিকে। যাদের সঙ্গে অল্প পরিমাণ মরিচ, তারা কেউ মাথায়, কেউ ভারে সাজিয়ে হেঁটে চলেন বালির পথ ধরে। গন্তব্য মরিচের হাট। বেশি পরিমাণ মরিচ বহনকারীরা ব্যবহার করে ঘোড়ার গাড়ি। প্রচণ্ড রৌদ্র আর ওই খরা তাপের যাত্রা শুধু পুরুষদের নয়- এই পথে সঙ্গী হতে দেখা গেছে নারী ও শিশুদেরও। এর পরই বেলা বারার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় লাল মরিচের বেচা-কেনা। ক্রেতা-বিক্রেতার দরদামে মুখরিত হয়ে ওঠে হাটের মাঠ। মরিচের জাত আকার ও মান ভেদে দাম নিয়ে চলে ক্রেতা-বিক্রেতার তোরজোর। এই হাটে মান ভেদে তিন ধরণের মরিচ পাওয়া যায়- উত্তম, মধ্যম ও নিম্ন মানের। মওসুম ভেদে ভিন্ন ভিন্ন দাম থাকে মরিচের। সকাল থেকে শুরু হওয়া হাটের বেচাকেনা চলে শেষ দুপুর পর্যন্ত।

স্থানীয় বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা জানান, ‘ফুলছড়ির মরিচ মানে ভাল মানের পণ্য। এক যায়গায় এত ভাল মানের মরিচ আর কোথাও মেলেনা। তাই দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসেন এখানে।

তবে চলতি মৌসুমে মরিচের দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট কৃষকরা। একাধিক কৃষকের অভিযোগ, উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারদর কম হওয়ায় তারা প্রত্যাশিত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

খোলাবাড়ি গ্রামের সাদেকুল বলেন, ‘ফুলছড়ি হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসছি। অল্প মরিচ তাই মাথায় নিয়ে এলাম। আবাদ করেছি চারবিঘা। ভালো হয়েছে ফলন। চরের মানুষের একমাত্র মরিচের হাট এটি। এখানেই সারা বছর আমরা মরিচ বিক্রি করে থাকি।

ফুলছড়ি হাট ইজারাদার অহিদুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এটি উত্তারাঞ্চলের সব চেয়ে বড় মরিচের হাট। এখানে জেলার চরাঞ্চলের কৃষকরা মরিচ বিক্রি করে থাকেন। দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এবং বিভিন্ন কোম্পানী এখানে মরিচ কিনতে আসেন। প্রতি হাটে সোয়া কোটি থেকে ২ কোটি টাকার মরিচ বেচা-কেনা হয়ে থাকে।

এ সময় তিনি সোয়া কোটি টাকার ডাক হওয়া হাটের নানা সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এই হাটের কোন নিজস্ব জায়গা নেই। এখন যে জায়গাতে হাট বসানো হয়েছে সেটি ভাড়া নেয়া। এছাড়া এই হাটটি খুব সকাল থেকে শুরু হয়। দূরের ব্যবসায়ীরা এখানে এসে রাতে থাকার কোন হাটসেড নেই।’

তিনি বলেন, এখানে সরকারি খাস জমি রয়েছে। সেটি ভরাট করে অবকাঠামো এবং হাটের সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং ব্যবসায়ীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সুবিধা দেয়া গেলে হাটটি আরও জাকজমক হবে, সরকারি রাজস্ব বাড়বে। বিষয়গুলো আমলে নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর