ছাগলকাণ্ড নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ব্যাংকে নিজের একাধিক হিসাব থেকে আট কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান। তিনি ওই টাকা কোথায় সরিয়েছেন তার খুঁজে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক সূত্র জানায়, অবৈধ সম্পদ এবং ব্যাংক হিসাবের টাকার অনুসন্ধানে রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা সরানোর তথ্য মিলেছে। ১১৫টি ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সেখানে মাত্র ৪ কোটি টাকা রয়েছে। আর ছাগলকাণ্ড নিয়ে হট্টগোলের মধ্যেই এসব হিসাব থেকে আট কোটি টাকা তুলে নেন মতিউর। এদিকে অনুসন্ধান শুরুর পর গা-ঢাকা দিয়েছেন মতিউর।
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম জানান, মতিউর দেশের বাইরে চলে গেছেন এমন কোনো তথ্য নেই। আর টাকা যেখানেই সরানো হোক না কেন খুঁজে বের করা অসম্ভব নয়।
জানা যায়, মতিউরের বিরুদ্ধে এর আগে চারবার দুর্নীতির অভিযোগ পায় দুদক। কিন্তু প্রতিবারই নানা কৌশলে প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে ক্লিন চিট পেয়েছিলেন তিনি।
মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম দুদকে অভিযোগ আসে ২০০৪ সালে। সে সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের। অভিযোগ আছে, হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা টাকা প্রবাসী কোনো এক আত্মীয়র মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে তা রেমিট্যান্স বাবদ দেখিয়ে দিয়েছিলেন ট্যাক্স ফাইলে।
২০০৮ সালে আবারও দুদকে অভিযোগ জমা পড়ে তার বিরুদ্ধে। এবার অভিযোগ বিলাসবহুল পণ্যের শুল্ক মাফ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন। কিন্তু তদন্ত শুরু হতে না হতেই প্রভাবশালীদের চাপে তা চাপা পড়ে যায়। ক্লিন চিট পান মতিউর।
এরপর ২০১৩ ও ২০২১ সালে আরও দুবার দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়। অভিযোগ ছিল অবৈধ সম্পদ ও সম্পত্তির। কিন্তু কৌশলী মতিউর অবৈধ সম্পদকে পারিবারিক ব্যবসা ও ঋণ দেখিয়ে প্রস্তুত করেন ট্যাক্স ফাইল। ফলে আবারও মিলে যায় ক্লিন চিট।
তবে পঞ্চমবারের মতো তদন্তে নেমে দুদক আগের চারবারের প্রতিটি বিষয়ে পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছে। একই সঙ্গে কে বা কাদের মাধ্যমে বার বার দায়মুক্তি পেয়েছেন মতিউর, তা-ও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে দুদক।
প্রসঙ্গত, ঈদুল আজহার আগে মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এনবিআরের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। মাঠে নামে দুদক।