যশোরের কেশবপুরে গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ভরতভায়না থেকে সুফলাকাটি ইউনিয়নের কলাগাছি বাজার পর্যন্ত সড়কের পাশের বেশিরভাগ জায়গা শিম গাছের বেগুনি ও সাদা ফুলের সমারোহ মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে গাছের নিচে দেখা ছোট-বড় জলাশয় আর তার পাড় ঘেঁষে এখন শুধু ঝুলছে শিম গাছের লতা। কোনো কোনো জলাশয়ের পাড়ে দেখা মিলবে লাউ কিংবা কুমড়া গাছের।উপজেলার গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ভরতভায়না, সন্যাসগাছা, ভেরচি ও বুড়লি গ্রামেরে বেশিরভাগ মানুষ জলাশয়ে (ছোট-বড় পুকুর) মাছ চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে আবাদ করেছেন নানা সবজি। রবি মৌসুমে এই অঞ্চলের জলাশয়ের পাশ ঘেঁষে শোভা পাচ্ছে শিমগাছ। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তিন মৌসুমের মধ্যে এই উপজেলায় খরিপ এ ৭৫০ হেক্টর, খরিপ-২৩ ৮৪১ হেক্টর এবং রবি মৌসুমে কমবেশি ৯৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এর মধ্যে খরিপ-১এ গৌরীঘোনা ইউনিয়নে সমতল ও ঘের মিলিয়ে ১৩৫ হেক্টর, খরিপ-২এ ১৬৩ হেক্টর এবং রবি মৌসুমে ১৭০-১৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করেন তারা। সন্যাসগাছা গ্রামের কৃষক আফসার সরদার বলেন, জলাশয়ের পাশে ৩০০ মান্দা (কয়েকটি গাছের সমষ্টি) শিমগাছ লাগিয়েছেন। এখন শিমের একটাই শত্রু, সেটি হলো কালোমাকড়। গাছের পাতার নিচে এই মাকড় লেগে পুরো পাতার রস খেয়ে ফেলে। এতে পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই ওষুধ ছিটানো লাগছে।’ কৃষি বিভাগের লোকজন পরামর্শ দিতে আসেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে আসেন। দুই-একটা ওষুধের নাম বলে যান। কিন্তু তা দিলেও কাজ হয় না।’ পাশের গ্রাম ভরতভায়নার বাসিন্দা লাভলু হোসেন বলেন, ‘ঘেরের পাশে আমায় দেড়শ মান্দা আর ১০ কাঠা জমিতে রয়েছে শিমগাছ। সবমিলিয়ে চার শতাধিক মান্দা। তবে গাছে কালোমাকড় খুব সমস্যা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটু আগে ডিলারের কাছ থেকে পাইন ও আশামিল ৭২ নামে দুটি ওষুধ এনেছি। এগুলো গাছে স্প্রে করলে হয়ত ঠিক হয়ে যাবে।সন্যাসগাছা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেই, ‘আমার পাঁচশ’ মান্দা গাছ রয়েছে। ঘের রয়েছে ৪৬ শতক জমিতে। ঘেরে চিংড়ি ও সাদা মাছ যেমন, রুই-কাতলা চাষ করছি। ঘেরের পাড়ে কিছু লাউগাছ আছে। গত মাস থেকে প্রতি দিন লাউ বিক্রি করছি। ১০-১৫টি লাউ প্রতিদিন তুলি। প্রতিটি ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিন মাস পরপর মাছ বিক্রি করি। গত সপ্তাহে ১৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি। আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ঘেরের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে সবজি চাষ করেন। এতে সবাই স্বাবলম্বী হয়েছেন।গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আফজাল হোসেন বলেন, ‘গৌরীঘোনা, সুফলাকাটি, মঙ্গলকোট ইউনিয়নের মানুষ ঘেরের পাশে সবজি চাষ করেন। এই অঞ্চলে যেমন মাছের উৎপাদন ভালো তেমনি সবজিরও। বর্তমানে শিম চাষ হচ্ছে বেশি। এছাড়া লাউ, পালংশাক, কুমড়া ও টমেটোর আবাদ হয়। সবজি ও মাছ চাষ করে এসব গ্রামের প্রায় সবাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
শিম চাষ করে স্বাবলম্বী কেশবপুরের কৃষকরা
এ বিভাগের আরো খবর/p>