ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনে হরতালের মতো কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
রোববার বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি শুরু হবে।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধের সময় কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর প্রায় এক ঘন্টা ধরে চলমান শাহবাগ মোড়ের অবরোধ ছেড়ে দেয়া হয়। এর আগে বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে শিক্ষার্থীরা মোড় অবরোধ করেন।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেয়া শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। পরে তাদের এই অবস্থানে মিছিল সহকারে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এরপর শিক্ষার্থীদের মিছিল কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসি, জগন্নাথ হল মোড় হয়ে বকশিবাজার, বুয়েট, পলাশী, আজিমপুর হয়ে ইডেন কলেজ, হোম ইকনোমিক্স কলেজ হয়ে ফের নীলক্ষেত-রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগে এসে মোড় অবরোধ করেন।
কর্মসূচি ঘোষণার আগে বৈষম্যবিরোধী এই ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়য়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এতোদিন পুলিশ আমাদেরকে সহযোগিতা করে এসেছে। কিন্তু আজকে পুলিশের একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী আমাদেরকে ভুয়া বলে সম্বোধন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আঙ্গুল উঁচিয়ে কথা বলেছে। আমার দিকে তেড়ে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে আমাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সেটি উপেক্ষা করে সুবিধাবাদী কোনো গোষ্ঠী যদি ফায়দা লুটার চেষ্টা করলে আমরা তাদের হাত গুঁড়িয়ে দেব। আমাদের দিকে যে পুলিশ আঙ্গুল তুলে তেড়ে এসেছিলেন, সাবধান করে দিচ্ছি- সেই আঙ্গুল নামিয়ে ফেলুন। অন্যথায় বাংলার ছাত্রসমাজ এর জবাব দেবে।’
হাসনাত বলেন, ‘আজকে আমাদের শাহবাগ ব্লকেড হয়েছে। আগামীকাল (রোববার) থেকে বাংলাদেশ ব্লকেড শুরু হবে। আজকের মতো কালকেও যদি আমাদের বোনেরা সামনে দাঁড়িয়ে যায় কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আগামীকাল (রোববার) বিকেল ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়; সায়েন্সল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীসহ ঢাকার প্রতিটি পয়েন্ট অবরোধ করা হবে।
‘এসব পয়েন্টে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা নেমে আসবেন এবং বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি সফল করবেন। আর ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা জেলায় জেলায় মহাসড়কগুলো অবরোধ করবেন।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সরকার মনে করেছে আমরা দুই-তিনদিন রাস্তা অবরোধ করে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে যাব। সরকারের এই ধারণা যে ভুল সেটি আমাদের প্রমাণ করে দিতে হবে। আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। প্রয়োজনে আমরা হরতাল দিতে বাধ্য হবো।’
নাহিদ বলেন, ‘কোর্ট ও ছাত্রসমাজকে মুখোমুখি করে সরকার কেন দায়িত্বহীন ভূমিকা পালন করছে? নির্বাহী বিভাগ এর দায় এড়াতে পারে না। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী যেখানে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে কোটা থাকবে না, সেই কোটা এখন কেন ফিরে এলো এর জবাব আমরা চাই।
‘শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে নয়; তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতেও কোটার বৈষম্য দূর করতে হবে। আমাদের এই আন্দোলন শুধু প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর কোটার জন্য নয়, সব গ্রেডের কোটা বাতিল করতে হবে।’
অভিভাবকদের উদ্দেশে বলছি, ‘আপনার সন্তানও কিন্তু চাকরি পাবে না যদি কোটা থাকে। আপনাকেও নেমে আসতে হবে। অভিভাবক এবং শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা শাহবাগে এসে আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করুন।’
ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দিয়ে নাহিদ বলেন, ‘শিক্ষকদের আন্দোলন একদিন বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের আন্দোলন বন্ধ হবে না। শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না।’
লাইব্রেরি খোলার ব্যাপারে নাহিদ বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনেক আগে থেকেই বলে আসছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও সায়েন্স লাইব্রেরি খুলে দেয়ার জন্য। আপনারা দ্রুত খুলে না দিলে আমরা নিজ দায়িত্বে খুলে নেব।