টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলের প্রভাবে শেরপুরের ব্রহ্মপুত্র ও দশানী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্ষার শুরুতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।
গত দুই দশকে কামারেরচর ইউনিয়নের ৬ নং চর এলাকায় নদীগর্ভে চলে গেছে শত শত একর আবাদি জমি ও বাড়িঘর। কিন্তু ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো টেকসই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বর্তমানে হুমকির মুখে আছে মসজিদ, মাদ্রাসা, পোস্ট অফিস, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কবরস্থান। ভাঙনের কারণে চরম আতঙ্ক আর হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন ৬ নম্বর চরের মানুষজন।
ভাঙনের কবলে পড়া নদীতীরের মানুষ শেষ সম্বল হিসেবে ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা
সরেজমিনে জানা যায়, এ বছর মৌসুমের শুরুতেই দশানি নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুদিনেই বিপুল আবাদি জমিসহ অর্ধশতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে ৬ নং চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও দুটি মাদ্রাসা, পোস্ট অফিস, গ্রামের রাস্তা ও গোরস্তান। আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে মানুষ।
অনেকেই শঙ্কায় আছেন কখন তাদের বাড়িঘর ও জমি নদীগর্ভে চলে যায়। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে নদীগর্ভে চলে যেতে পারে এই এলাকার নদীপাড়ের অনেক বসতবাড়ি, আবাদি জমি ও প্রতিষ্ঠান।
৬ নং চরের নদীপাড়ের বাসিন্দা বৃদ্ধ আয়নাল বলেন, ‘আমার পূর্বপুরুষদের কবর এখানে। মনে করছিলাম আমার কবরটাও একসাথে হবো। কিন্তু ভাংগনে তো আর গোরস্থানটা রাখবার দিতাছে না। অর্ধেক তো ভাইঙ্গা নিয়াই গেছে গা। আর অর্ধেক ভাঙতে কতহন। যারা মারা গেলো তাদের শেষ চিহ্নখানিও রাখবার পাইতাছি না এহন।’
৬ নং চরের উত্তরপাড়ার নদীপাড়ের বাসিন্দা মো. আসাদ বলেন, ‘আজ দুইদিন ধইরে যে ভাঙা দিছে, আমরা জমিজমা নিয়া খুব চিন্তায় আছি। ভাঙনের শব্দে রাইতে ঘুমাই না। গত বছর একটু ঠিকঠাক করলেও, এসব আবার ভাংতাছে। মসজিদ আছে, মাদ্রাসা আছে, গোরস্থান আছে। এগুলো আপনারা যদি দেহেন তাইলে এহনি দেহন নাগবো। আপনারা একটু চেষ্টা কইরা দেহেন।’
একই গ্রামের পশ্চিমপাড়ার মো. করিম মিয়া বলেন, ‘গত বছর অনেক গুইলা বাড়িঘর ভাইংগে নদীর ওইপারে গেছেগা। এ বছরের শুরুতে পাইলিং করা না গেলে তাহলে এবার থাহা কষ্ট হয়ে যাবো গা।
‘গত বছর হুছনারা এমপি আইয়া একটু বস্তা ফেলছিলো, এ বছরও ভাংতাছে। এহন যদি না বান্ধে তাইলে এহানে থাহাডা অসম্ভব হইয়া যাবো গা।’
কামারবাড়ির মো. নিরব বলেন, ‘আমাদের ৬ নং চর প্রাইমারি স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট, ঈদগাহ মাঠ বিলীন হইয়া যাবে নদীতে। অতি জরুরি যদি ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে এগুলো রক্ষা পাবে। তা না হলে বিলীন হইয়া যাবো গা।’
উত্তরপাড়ার সিদ্দিক বলেন, ‘আমগরে সবকিছু ভাইংগে নিতাছে গা। আপনারা আইয়া দেইখা যান, তাইলে বুঝবেন। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে, আতঙ্কের মধ্যে আছি। আপনারা যদি একটু বাইন্ধে দেন তাইলে বাড়িঘরে থাকবার পামু। তা-না অইলে দেশ ছাইরে যাওন নাগবো গা।
আলম মিয়া বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর সবকিছুই নদী নিয়ে যাইতেছে। আমাদের দাবি এখানে একটা স্থায়ী ও শক্ত বাঁধ নির্মাণ করা। কয়ডা করে বালুর বস্তা ফেলাইয়া গেলে কী হবে? আবার এসব বস্তা নদীয়ে নিয়ে যাবে।’
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, ,দশানি নদীর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। শেরপুরের বেশ কয়েকটি নদীতীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেগুলোর স্থায়ীভাবে ব্যবস্থার করার জন্য আমরা ডিপিপি দিয়েছি।
এই নদীর ভাঙন এলাকা আমরা পর্যবেক্ষণ করতেছি। সেখানে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। সমস্যা বেশি দেখা দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’