টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বিশ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল। ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন অবস্থায় আছে সিলেট নগরও। নগরের অনেক রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি তলিয়ে গেছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বেড়েই চলেছে পানি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে সিলেটের চারটি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সোমবার রাত পর্যন্ত সিলেট জেলায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তবে মঙ্গলবার স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, জেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা দুই লক্ষাধিক।
বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদের দিন কুরবানির পশুর মাংস, শুকনো খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব জানান, সিলেটে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর মঙ্গলবার সকল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৪৪ মিলিমিটার। আর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১২ মিলিমিটার।
আগামী দুদিনও সিলেটে টানা বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে ঢলের পানিতে ২৭ মে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ফের বন্যাকবলিত হলো সিলেট।
সোমবার রাতে সিলেট জেলা প্রশাসন জানায়, জেলার ১৩টির মধ্যে ১০টি উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি। তবে বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকায় বাড়ছে প্লাবিত এলাকা। ইতোমধ্যে জেলার কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার মামার দোকার এলাকার ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ‘বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রবল বেগে ঢলের পানি নামছে। এলাকার অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে।’
এদিকে সোমবার ঈদের সকালে টানা বৃষ্টিতে নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে ঈদের জামাত ও কোরবানি নিয়ে বিপাকে পড়েন নগরবাসী। তবে দুপুরের পর বৃষ্টি থামলে নামতে শুরু করে নগরের পানি।
কিন্তু মঙ্গলবার ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় সিলেটে বৃষ্টিপাত। ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও বাড়তে শুরু করে সিলেট নগরের পানি। এর প্রভাবে আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে নগরে।
নগরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা কাইয়ুম আহমদ বলেন, ‘পানিতে বাসা ও সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় কাল কোরবানি দিতে পারিনি। আজ (মঙ্গলবার) পরিস্থিতি আরও খারাপ। পানি দ্রুত বাড়ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগরের সব নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এছাড়া যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
এছাড়া নগরের মধ্যে অনেক সড়কে পানি রয়েছে। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তামাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান পানির নিচে।
বাপাউবো সিলেট কার্যালয় মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জানায়, এ সময় পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা থেকে ১৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীটির সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে।
কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার এবং নদীর সারিগোয়াইন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ইন্ডিয়া মেট্রোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে দ্রুত বাড়ছে সিলেটের নদ-নদীর পানি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। জেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।’