নেত্রকোণায় গণপূর্ত বিভাগের তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের কাছ থেকে অবৈধভাবে উৎকোচ গ্রহণ করে বিল আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে বিভাগীয় হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে অভিযোগকারী ঠিকাদাররা নেত্রকোণা গণপূর্ত কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। ওই সময় হিসাবরক্ষক নাছিমা আক্তার রেখার একটি ব্যক্তিগত গাড়ি আটক করেন বিক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা। পরে আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুপারিশে চালকের কাছে গাড়ির কাগজপত্রসহ গাড়ি ফেরত দেন তারা।
সন্ধ্যা আনুমানিক সাতটা পর্যন্ত নেত্রকোণা গণপূর্ত অফিসের সামনে ঠিকাদাররা হিসাবরক্ষকের প্রত্যাহারের দাবি জানান গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।
নেত্রকোণা গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, হিসাবরক্ষক নাছিমা আক্তার রেখা ২০২২ সালের জুলাই মাসে ময়মনসিংহ গণপূর্তের কার্যালয় থেকে পদোন্নতি পেয়ে নেত্রকোণায় যোগদান করেন।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, যোগদানের পর থেকেই নাছিমা আক্তার রেখা টাকা ছাড়া কোনো বিল নথিতে হাত দেন না। যারা তাকে টাকা দেন, তিনি তাদের বিল ছেড়ে দেন। এ ছাড়া তার চাহিদা মতো টাকা আগে না দিলে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে বিল আটকিয়ে রাখেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাদিরা কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গত দুই বছর আগে আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুই লাখ ৬১ হাজার টাকার সংস্কার কাজ করি। যথাসময়ে কাজ শেষ করে বিল জমা দেই। নিয়ম মাফিক অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিলে স্বাক্ষর করলেও হিসাবরক্ষক নাছিমা আক্তার রেখা বিলটি টাকার জন্য আটকিয়ে রাখেন।
‘পরে তিনি গত জুন মাসে আমার কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ চাইলে ওই সময় নগদ আট হাজার টাকা দেই, কিন্তু তার চাহিদা পূরণ না হওয়ায় তিনি বিভিন্ন অজুহাতে আমার বিলটি আটকিয়ে রাখছেন।’
চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সুজন ভূঁইয়া বলেন, ‘নেত্রকোণা মেডিক্যাল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে সংস্কার কাজ শেষে ২০২২ সালের জুলাইয়ে ১৫ লাখ টাকার বিল জমা দেই, কিন্তু হিসাবরক্ষক ওই কার্যালয়ে যোগদান করেই আমার কাছে ৭৫ হাজার টাকা চান। আমি টাকা না দেয়ায় তিনি আমার বিলের পুরো ফাইলটি গায়েব করে দিয়ে এখন বলছেন আমি নাকি কোনো বিল জমা দেইনি।
‘পরে আমি ফটোকপি দেখালে তিনি বলেন, এক লাখ টাকা নিয়ে আসতে। এভাবে তিনি আমার মতো সব ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েও কাজ করছে না। তিনি দামি গাড়িতে করে অফিস করেন।’
ঠিকাদার এনামুল হক রুমেল বলেন, ‘আমার মতো এ রকম সূচি কনস্ট্রাকশন, নাহিদ এন্টারপ্রাইজ, সরকার এন্টারপ্রাইজ, সাদ এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, ইমন এন্টারপ্রাইজ, নাদিরা কনস্ট্রাকশন, সরকার ট্রেডার্স, রহিমা এন্টারপ্রাইজ, জয়শ্রী এন্টারপ্রাইজ, এস.এ এন্টারপ্রাইজসহ প্রায় ২০ জন ঠিকাদারের আটকিয়ে রেখেছেন তিনি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হিসাবরক্ষক নাছিমা বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোনো কথা বলব না। তিনি আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি। আর টাকা চাইলেই সহজেই কি কেউ দিয়ে দেয়?’
গাড়িটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদাররা এভাবে আমার গাড়ির আটকিয়ে রেখে কাগজপত্র নিতে পারে না, তবে গাড়িটি আমার না। এটা আমার বোন জমাইয়ের।’
নেত্রকোণা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসিনুর রহমান বলেন, ‘হিসাবরক্ষকের বিষয়ে অভিযোগ শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’