বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্ত্রীর সামনে পান ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার অভিযোগ

  •    
  • ১৪ জুন, ২০২৪ ২১:০১

আলমগীরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সঠিক বিচারের জন্য আমরা থানায় গিয়েছিলাম। ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি বলেছি পুলিশকে। পুলিশ আমার কাছে চারটা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে। আমি পড়াশোনা জানি না, তবে আমি আমার স্বাক্ষর চিনতে পারব।’ 

ঠাকুরগাঁও সদরে দোকান থেকে তুলে নিয়ে এক পান ব্যবসায়ীকে নির্যাতন করে ও ট্যাবলেট খাইয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী, স্বজন ও স্থানীয়রা।

উপজেলার রুহিয়া এলাকায় বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে।

ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার বিকেলে আলমগীর হোসেন (৩২) নামের ওই ব্যবসায়ীর মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

আলমগীর রুহিয়ার আবদুর রহিমের ছেলে। স্থানীয় বাজারে পানের দোকান ছিল তার।

এ ব্যবসায়ীর পরিবার, স্বজন ও স্থানীয়দের ভাষ্য, জমিসংক্রান্ত বিরোধে পান দোকানিকে তুলে নিয়ে গিয়ে তিন ঘণ্টা ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে গ্যাসের ট্যাবলেট খাইয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।

আলমগীরের স্ত্রী রেজিনা আক্তার বলেন, “আমার স্বামী ঘটনার দিন (বৃহস্পতিবার) সকালে ঘুম থেকে উঠে পানের ঘুন্টি (দোকান) খুলেছে। আমি ১১টার দিকে দোকানে যাওয়ার পর আমার চোখের সামনে শরিফুল ইসলাম ওরফে দরবেশ, নূর ইসলাম ইসলাম এবং সাদেকুল ইসলাম ওরফে লোধা আমার স্বামীকে জোর করে ধরে নিয়ে গেলেন। পরে তিন ঘণ্টা পর আমার স্বামীর খোঁজ করতে তাদের সঙ্গে দেখা করি এবং স্বামীকে ফেরত চাই। ওরা আমাকে হুমকি ও তেড়ে আসে মারার জন্য। আমি দৌড়ে আমার মামা শ্বশুরের দোকানে এসে এক গ্লাস পানি খাই।

“কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই আমার স্বামী ঢুলতে ঢুলতে আসছে। আমি আবার দৌড় দিয়ে তার কাছে গেলে সে বলে, ‘আমাকে ধরো। আমার বুকটা জ্বলে যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে। আমাকে বাসায় নিয়ে চলো। ওরা আমাকে যে কী খাইয়ে দিয়েছে। আমার বুকটা জ্বলছে।’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার অবস্থার অবনতি হয় এবং রংপুরে রেফার্ড করে। হাসপাতালে যাওয়ার পথে গেটে আমার স্বামী মারা যায়। আমি স্বামী মৃত্যুর বিচার চাই।”

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলমগীর খুব ভালো মানুষ ছিলেন। বাবাকে অল্প বয়সে হারিয়ে লড়াই-সংগ্রাম করে নিজের সংসার গুছিয়েছেন। নিয়মিত বাজারের একটি হোটেলের সামনে পান দোকান মনোযোগ দিয়ে করতেন। ঘটনার দিন তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ছাড়ার পর তিনি অসুস্থ হন এবং ছটফট করতে করতে মারা যান।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘এটি একটি রহস্যজনক মৃত্যু। এটিকে আত্মহত্যা বলে চালানো হলেও আমাদের চোখে বিষয়টি একেবারেই এমন নয়। হয় তাকে নির্যাতন করে বিষাক্ত কিছু খাইয়েছে অপহরণকারীরা নয়তো তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে।

‘আমরা এর সঠিক তদন্ত চাই। অভিযুক্তরা কেউ এলাকায় নেই। সবাই আত্মগোপনে চলে গেছে। তাদের গ্রেপ্তার করলেই ঘটনার রহস্য বেরিয়ে আসবে।’

আলমগীরের স্ত্রীর বড় ভাই বলেন, ‘অভিযুক্তদের বাঁচাতে এ মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে গ্রামের একটি প্রভাবশালী মহল, কিন্তু এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

‘অন্যায়ভাবে তাকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে গিয়ে গ্রামের জমি কেনাবেচার একটি চক্র এ কাজটি করেছে। আমরা পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা নিশ্চয়ই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’

স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘চেয়ারম্যান একটি পক্ষ নিয়ে কাজ করছে (অভিযুক্তদের পক্ষ)। আমার মনে হচ্ছে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত হতে পারে।’

এ বিষয়ে রাজাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানান। আসরের নামাজের কথা বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে যান তিনি।

আলমগীরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সঠিক বিচারের জন্য আমরা থানায় গিয়েছিলাম। ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি বলেছি পুলিশকে। পুলিশ আমার কাছে চারটা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে। আমি পড়াশোনা জানি না, তবে আমি আমার স্বাক্ষর চিনতে পারব।’

এদিকে জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষরিত পুলিশের দেয়া অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদবিষয়ক একটি কাগজ এ প্রতিবেদকের হাতে আসে। সেই কাগজে জাহাঙ্গীর তার স্বাক্ষর চিনতে পারেন, কিন্তু কাগজে কী লেখা আছে, তা পড়তে পারেননি তিনি।

জানতে চাইলে রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গুলফামুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ‘ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও স্থানীয় তদন্তে হত্যার উপাদান পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ জন্যই লাশের ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে।’

স্বাক্ষরের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘দুই কপি দরখাস্তে স্বাক্ষর লাগে। লাশ হস্তান্তরে স্বাক্ষর লাগে। শনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর লাগে।’

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা ডা. রকিবুল আলম বলেন, ‘বিষক্রিয়ার কথা বলে আলমগীর হোসেনকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।

‘আজকে সেই রোগীর ময়নাতদন্ত আসলে আমরা বুঝতে পারি তিনি মারা গেছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর