বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বানভাসীরা কেন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না

  •    
  • ২ জুন, ২০২৪ ১৮:২৩

কেন আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে সাজন বলেন, ‘আমরা সারা জীবন দেখে এসেছি সকালে পানি বাড়লে বিকেলে কমে যায়। এখানে তো জোয়ারের (পাহাড়ি ঢলের) পানি। এত দীর্ঘ সময় ধরে আর এত দ্রুত পানি বাড়বে এটা আমরা জীবনেও ভাবিনি।’

গত ২৯ মে এক দিনের ঢলেই তলিয়ে গিয়েছিল সিলেটের পাঁচ উপজেলা। সেদিন পরিবার নিয়ে ঘরেই ছিলেন জৈন্তাপুরের ফেরিঘাট এলাকার মো. সাজ্জাদুর রহমান সাজন। এরপর রাতভর ভয়াল অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় এই পরিবারকে।

সে রাতের ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়ে সাজন বলেন, ‘পানি যখন বাড়ছিল, উপায় না দেখে আম্মা ও ছোট ভাইকে ফ্রিজের ওপর তুলে দিয়ে আমি চৌকির ওপর দাঁড়াই। পানি যখন আমার নাক বরাবর চলে আসে তখন বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।’

কোনো উপায়ান্তর না দেখে বাঁচার আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন সাজন। যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। তা দেখে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। কিন্তু অতিরিক্ত স্রোতের কারণে সাজনের বাড়িতে পৌঁছাতে পারেননি তারা। পরে ভোররাতে স্থানীয়রা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাজনদের উদ্ধার করেন।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে পানি বাড়ছে দেখেও কেন সাজন পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেন না? এমন প্রশ্ন খোদ জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘এ রকম পাহাড়ি ঢলের সময় স্রোত কী পরিমাণ বাড়ে সেটা উনার জানা ছিল। তার এভাবে বাড়িতে থাকা ঠিক হয়নি। ওই রাতে আমরা খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়াঘাট এলাকায় যাই। কিন্তু পানির স্রোত এত তীব্র ছিল যে অনেক চেষ্টা করেও কোনো নৌকা বা মাঝি ম্যানেজ করা যায়নি।’

কেন আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে সাজন বলেন, ‘আমরা সারা জীবন দেখে এসেছি সকালে পানি বাড়লে বিকেলে কমে যায়। এখানে তো জোয়ারের (পাহাড়ি ঢলের) পানি। এত দীর্ঘ সময় ধরে আর এত দ্রুত পানি বাড়বে এটা আমরা জীবনেও ভাবিনি।’

কেবল সাজন বা তার পরিবার নয়, বেশিরভাগ বন্যার্তই বিপদ জেনেও নিজ ঘর ছাড়তে চান না। যেতে চান না আশ্রয়কেন্দ্রে। সিলেট জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান থেকেও এ ব্যাপারে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে রোববার সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান স্বাক্ষরিত তথ্য থেকে জানা যায়, রোববার পর্যন্ত সিলেটে বন্যায় আক্রান্ত জনসংখ্যা ৬ লাখ ৮ হাজার ৩৩৫ জন। অপরদিকে, আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন মাত্র ১ হাজার ৮০৬ জন। ফলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা ৫৫০ আশ্রয় কেন্দ্রের বেশিভোগই ফাঁকা পড়ে আছে।

জকিগঞ্জের বীরশ্রী এলাকার সাজমা বেগমের ঘরে হাঁটু সমান পানি। পানির মধ্যেই পরিবার নিয়ে ঘরেই থাকছেন তিনি। আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি।

এ প্রসঙ্গে সাজমা বেগম বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে তো আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়া যাবে না। আবার বাড়ি ফাঁকা করে গেলে চোর ডাকাতরা এগুলো নিয়ে যাবে। তাতে আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তার চেয়ে কষ্ট সহ্য করে এখানেই থাকা ভালো।

সিলেটের বন্যা আক্রান্ত তিনটি উপজেলার আরও আরও অন্তত ১০ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে না যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা এ রকম নানা যুক্তি দেখিয়েছেন। বেশিরভাগই চোর-ডাকাতের ভয়, ঘরের নিরাপত্তা ও গবাদিপশুর কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে না যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রের পরিবেশের কারণেও সেখানে যেতে আপত্তি কারো কারো।

নিজের গবাদিপশুর কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন গোয়াইনঘাটের বল্লাঘাট এলাকার বাসিন্দা সিরাজ আহমদ। তিনি বলেন, আমার কিছু হাঁস-মোরগ ও দুইটা গরু আছে। আমি আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে এগুলোর কী হবে। তাই ঘরেই হাঁসমোরগের জন্য উঁচু মাচাং তৈরি করেছি। নিজেরাও খাটের ওপর থাকছি।

নগরের তেররতন এলাকার একটি কলোনীর বাসিন্দা সোলেমান আহমদ বলেন, এখান থেকে আশ্রয়কেন্দ্র অনেক দূরে। তাই ঘরে পানি উঠলেও কষ্ট করে এখানেই থাকতে হচ্ছে।

বন্যার্তরা আশ্রয়কেন্দ্রে না যাওয়ায় তারা নিজেরাই ঝুঁকিতে পড়ছেন জানিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক বলেন, যারা ঝুঁকিতে আছেন তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে, দ্বিতীয় দিনের মতো রোববার সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। শনিবার নগরের পানি বাড়লেও রোববার আর বাড়েনি। কমছে প্লাবিত সাত উপজেলার পানিও। ইতোমধ্যে অনেক বাড়িঘর থেকে পানি নেমে গেছে। তবে পানি উজান থেকে ভাটির দিকে নামতে থাকায় সুনামগঞ্জের কিছু এলাকায় বন্যার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের সবগুলো নদনদীর পানি কমছে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ স্থানে বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে পানি। রোববার বিকেলে সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা থেকে ১ সেন্টিমিটার নিচে নেমেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি)।

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, সিটি কর্পোরেশন এলাকার বেশ বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যায় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বেশির ভাগ এলাকার। তা ছাড়া বন্যার ঝুঁকিতে আছে এমন সব ওয়ার্ডে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানি বাড়লে তাদের ওই আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হবে।

তিনি আরও জানান, নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাশ্ববর্তী একটি ৫ তলা খালি ভবনে দুটি আশ্রয় কেন্দ্রে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তাদের রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিসিকের স্বাস্থ্য শাখার একটি চিকিৎসক দল সেখানে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। তা ছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এই দুটি আশ্রয় কেন্দ্রসহ বন্যা কবলিত ওয়ার্ডগুলোতে শুকনা খাবার, চিড়া, মুড়ি, ঘুড়, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধ করন ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন ও কিছু কিছু ওয়ার্ডে মোমবাতি সরবরাহ করা হয়েছে। শনিবার বিকেল থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খিচুড়ি দেয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে ৭.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরপর আর বৃষ্টি হয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর