বাংলাদেশের খ্যাতিমান শিল্পোদ্যোক্তা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিক্ষানুরাগী ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতকে নিয়ে সাবেক এক সাংবাদিকের কিছু অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত, কল্পনাপ্রসূত এবং সর্বৈব মিথ্যা বক্তব্য নিয়ে দু-একটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। সিটিজেন টিভির চেয়ারম্যান পরিচয়ে সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান ওই কাল্পনিক গল্পের অবতারণা করেছেন।
ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত অত্যন্ত সজ্জন ও পরিশ্রমী ব্যবসায়ী। দেশ-বিদেশে তার যে সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে তা বিনষ্ট করার হীন উদ্দেশে শফিকুর রহমান এই জঘন্য অপপ্রচারে নেমেছেন বলে মনে করছেন অনেকে। তারা বলছেন, শফিকুর রহমান যে কল্পকাহিনী রচনা করেছেন তা শুধু মিথ্যাই নয়, হাস্যকর ও নিন্দনীয়।
একজন স্বনামধন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রচার সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত একটি গর্হিত কাজ। শফিকুর রহমান তার ওই অযাচিত বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শফিকুর রহমানের গল্পটা অবশ্য পড়লেই বোঝা যায়, এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট। তিনি বলতে চেয়েছেন, হঠাৎ এক দিন গভীর রাতে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত তাকে (শফিকুর রহমান) তার বনানীর বাড়ি থেকে তুলে ওয়েস্টিন হোটেলে নিয়ে গিয়ে জোর করে তার স্বাক্ষর নিয়ে সিটিজেন টিভির শেয়ার লিখে নেন।
কোনো ব্যক্তির পক্ষে অপর একজন ব্যক্তির বাসায় গিয়ে তাকে তার নিজ বাসা থেকে তুলে নেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয় এবং এটা বিশ্বাসযোগ্যও নয়। আর শফিকুর রহমানের মতো একজন চতুর সাংবাদিককে তো নয়ই। শফিকুর রহমান এতটা নির্বোধ নন যে, তাকে কেউ কোনো কাগজ দিলেই তিনি না পড়ে সই করে দেবেন। অথচ ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত কখনোই শফিকুর রহমানের বাসায় যাননি, যাওয়ার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এই একটি ঘটনা থেকেই বোঝা যায় কতটা বানোয়াট ও অপরিপক্ব গল্প সাজিয়েছেন তিনি।
ওয়েস্টিন একটি আন্তর্জাতিক হোটেল চেইন। কারও পক্ষেই কাউকে অপহরণ করে সেখানে নেয়া সম্ভব নয়। অনেক মানুষ থাকার জন্য এবং ব্যবসায়িক মিটিংয়ের নিরাপদ স্থান হিসেবে ওয়েস্টিনের মতো পাঁচ তারকা হোটেলকে বেছে নেন। সুতরাং তিনি এই বিশ্বমানের হোটেল চেইনেরও সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছেন।
একজন উগ্র মস্তিষ্কের মানুষ হিসেবে সাংবাদিক মহলে সমাধিক পরিচিত শফিকুর রহমান জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে অহরহ দুর্ব্যবহার করে থাকেন বলে একাধিক সাংবাদিক এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে চাঁদপুরে নিজ নির্বাচনি এলাকায় তার মেয়ের জামাইকে দিয়ে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
একজন চাকরিজীবী সাংবাদিক হয়েও শেয়ারবাজারে রয়েছে তার শতকোটি টাকার বাণিজ্য। নামে-বেনামে বহু ব্যাংকে তার অসংখ্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকার অভিযোগও রয়েছে। সাংবাদিকতার অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তিনি শেয়ার মার্কেটে একটি ব্রোকারেজ হাউসের মালিক হয়েছেন।
শফিকুর রহমান জোর করে ‘পথে প্রান্তরে’ নামে একটি পত্রিকা দখল করেছিলেন। পত্রিকাটির মালিক সাবেক সাংবাদিক ফিরোজ মান্না। ২০২৩ সালের ৮ জুন সদলবলে পত্রিকাটির অফিসে গিয়ে মান্নাকে জিম্মি করে জয়েন স্টক কোম্পানির কাগজে স্বাক্ষর নেন তিনি। মান্না পরে জয়েন্ট স্টক ও ডিসি অফিসে আপত্তি দেন। এ নিয়ে তিনি ডিইউজে ও বিএফইউজেতেও অভিযোগ করেন। গত ৫ অক্টোবর ডিসি অফিস এটা নিয়ে শুনানির জন্য ডাকলে শফিকুর রহমান লোকজন নিয়ে সেখানে মান্নাকে মারধর করেন।
সাংবাদিক ও সংসদ সদস্য শফিকুর রহমানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিব্রত প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরাও। সংগঠনটির একাধিক জ্যেষ্ঠ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই বলেন, ‘শফিকুর রহমান মূলত জামায়াতঘেঁষা। জামায়াতের মালিকানাধীন অধুনা বিলুপ্ত বিতর্কিত টেলিভিশন দিগন্ত টিভির টকশোতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ফোরাম থেকে তিনিই প্রথম অংশ নিয়েছিলেন। এ ছাড়া সভাপতি থাকাকালে তিনি অনেক জামায়াতপন্থীকে প্রেসক্লাবের সদস্য করেছেন।’
শফিকুর রহমান সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাংবাদিক বলেন, ‘এই রগচটা ও উগ্র মেজাজের মানুষটির কাজই হচ্ছে সম্মানিত মানুষদের অসম্মান করে কথা বলা এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করা।’
গত জাতীয় প্রেসক্লাব নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের (আওয়ামী লীগপন্থী) প্যানেলের বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগও করেন তিনি শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে।
তিনি আরও বলেন, ‘নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য তিনি (শফিকুর রহমান) যেকোনো আদর্শের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিতে একটুও দ্বিধা করেন না।’ এ রকম নীতিহীন মানুষের পক্ষে যেকোনো কাজ করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, নিজ সংসদীয় আসন চাঁদপুর-৪-এ নেতা-কর্মীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মদদ দেন তিনি। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর শফিকুর রহমানের সমর্থকদের সঙ্গে জাহিদুলের সমর্থকদের একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে জাহিদুলের লোকজনের প্রাধান্য পাওয়ায় শফিকুর রহমানের পক্ষ পাল্টা কমিটি দেয়।
ঢাকার অভিজাত এলাকায় অত্যাধুনিক বাড়ির মালিক শফিকুর রহমান। এমনকি তার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। প্রথমবার সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নেন।
শফিকুর রহমান মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। তিনি দাবি করেন, তিনি মাদ্রাসায় ছাত্রলীগ করেছেন, কিন্তু বাস্তবতা হলো মাদ্রাসায় তখন ছাত্রলীগের সংগঠন বা কার্যক্রম ছিল না।