বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দৈনিক ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য ব্যাহত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক    
  • ২৮ জুন, ২০২৫ ২২:২১

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে প্রতিদিন ২,৫০০ কোটি টাকার আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে আলোচনা করে এর সমাধান চেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ফলে আমদানি ও রপ্তানিকারকদের ওপর বিপর্যয় নিয়ে আসবে, যা হবে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি অশনিসংকেত। গতকাল শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা।

কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা সমস্যা নিরসনে আর সময় ব্যয় না করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যথা অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিডা যৌথভাবে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা অতীব জরুরি বলে মনে করেন। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলম বিরতি/কমপ্লিট শাটডাউনের মতো কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগদান করার আহ্বান জানিয়েছেন।

‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বর্তমান অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সংবাদ সম্মেলন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পড়েন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ)।

আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, এনবিআরের অন্তর্ভুক্ত দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলম বিরতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। উক্ত দপ্তরগুলোর কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চালু থাকায় প্রস্তুত/রপ্তানিকারকরো যথা সময়ে আমদানি করা কাঁচামাল খালাস করতে পারছেন না। ফলে দেশের রপ্তানিতে বর্ধিত লিড টাইম আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া পোর্টে/বিমানবন্দরে আমদানি-রপ্তানিযোগ্য পণ্য পড়ে থাকার দরুন বৃষ্টি/রোদে নষ্ট হচ্ছে। আংশিক কর্মঘণ্টার কারণে এক কর্মদিবসের মধ্যে প্রত্যাশিত ইউপি পেতে ১০-১৫ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। যাতে রপ্তানি বিলম্বিত হচ্ছে। সৃষ্ট জটিলতার কারণে কিছু কিছু বায়ার ইতোমধ্যে এয়ার শিপমেন্ট ও রপ্তানি আদেশ বাতিলের হুমকি দিয়েছেন। পাশাপাশি পোর্ট ড্যামারেজ নির্ধারিত রেটের চারগুণ হারে পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা ‘কস্ট অব ড্রইং বিজনেস’ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান জুন-জুলাই মাসে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, সিরামিক, ফার্মাসিউটিক্যাল, এগ্রো প্রসেসিং, প্লাস্টিকসহ সব রপ্তানিমুখী শিল্পের অধিকাংশ কারখানায়ই আগামী শীত মৌসুমের পণ্য তৈরির জন্য চাপ রয়েছে। এই পিক সিজনে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ও কাস্টমস হাউজের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোর অচলাবস্থার কারণে সঠিক সময়ে পণ্য রপ্তানি করতে না পারলে বায়াররা ক্রয়াদেশ বাতিল ও ভবিষ্যতে নতুন ক্রয়াদেশ প্রদানে অনাগ্রহী হতে পারেন। আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজার কখনো বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করবে না। এসব অর্ডার পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাবে, যা হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। এছাড়া উৎপাদিত পণ্য সঠিক সময়ে না পাঠাতে পারলে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক ও আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, জুন মাসেই ব্যবসায়ীদের ওপর বার্ষিক ব্যাংক ঋণের মুনাফা জমা দেওয়ার একটি চাপ থাকে। এই সময়ে এসব বিরোধের কারণে পণ্য রপ্তানি করতে না পারলে বায়ার কর্তৃক পেমেন্ট রিয়ালাইজেশন হবে না। ফলে ব্যবসায়ীরা একটি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমানে দেশের রপ্তানিকারী শিল্প নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গৃহীত আন্দোলন বায়ারদের মধ্যে পুনরায় ইমেজ সংকট সৃষ্টি করবে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আজ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত সব দপ্তরের কমর্কর্তা-কর্মচারীরা কমপ্লিট শাটডাউনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই সময়ে ওই দপ্তরগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হলে তা আমদানি ও রপ্তানিকারকদের ওপর বিপর্যয় নিয়ে আসবে, যা হবে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি অশনিসংকেত। সুতরাং ওই আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট স্থবিরতা ও চলমান সংকট দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করা অতীব জরুরি।

ব্যবসায়ীরা বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় একটি দক্ষ, হয়রানিমুক্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গড়ার লক্ষ্যে এ সার্বিক সংস্কার বা আধুনিকায়নকে সমর্থ করে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা ও আমদানি-রপ্তানিতে যথাযথ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনো মতেই কাম্য নয় এবং তা কোনো প্রকার সফলতা নিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি না।

উল্লিখিত পরিস্থিতিতে নিম্নরূপ পদক্ষেপ নিতে সরকারের শীর্ষ কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন ব্যবসায়ীরা।

১. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই প্রতিষ্ঠানের বিবিধ সেবা বিশেষত আমদানি ও রপ্তানি সংশ্লিষ্ট সেবা বন্ধে ঘোষিত কর্মসূচি থেকে অবিলম্বে তাদের সরিয়ে এনে ওই সেবার অব্যাহত প্রবাহ নিশ্চিত করা হোক।

২. উত্তম কর তথা রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও প্রণীত নীতি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আলাদাকরণ সংক্রান্ত তর্কিত অধ্যাদেশ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাবমুক্ত করে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা ও আমাদের জাতীয় বাস্তবতার আলোকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামগ্রিক আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে পরস্পরের পরিপূরক করে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাস্তবায়ন করা হোক।

৩. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সার্বিক উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব জাতীয় প্রতিষ্ঠানে হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক।

৪. বিনিযোগ, ব্যবসাবাণিজ্য, পণ্য সরবরাহ তথা সাপ্লাই চেইনের উন্নয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট অন্য রেগুলেটরি ও ফ্যাসিলিটেটিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক এবং সমন্বিত উন্নয়নের লক্ষ্যে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে অনতিবিলম্বে সংস্কার বা আধুনিকায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে সময়াবদ্ধ পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন করা হোক।

৫. উপরোক্ত উদ্দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সমন্বিত উদ্যোগ নিতে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে নির্দেশ দেওয়া হোক।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা মনে করি উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে মোটেও সময় ব্যয় না করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যথা অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিডা যৌথভাবে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা অতীব জরুরি। আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ ন্যায়সঙ্গত সুরক্ষা ও দেশের অর্থনীতি যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে এখনই জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

সেই সঙ্গে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ভাই-বোনদের দেশের অর্থনীতির স্বার্থে কলম বিরতি/কমপ্লিট শাটডাউনের মতো কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কোনো প্রকার পূর্বশর্ত ছাড়া অনতি বিলম্বে কাজে যোগদান করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি একটি ইনক্লুসিভ আলোচনার মাধ্যমে এ সংকট নিরসন করা সম্ভব। যেখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে যৌক্তিক সংস্কার করে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তারা নির্দ্বিধায় আগের মতো জাতির সেবা এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি মঈনুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ, এমসিসিআইর সহ-সভাপতি সিমিন রহমান প্রমুখ।

এ বিভাগের আরো খবর