আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ইস্যুতে সরকার বিব্রত নয়। কারণ সরকারের বিচার করার সৎসাহস আছে। সরকার তাদেরকে অপরাধ অস্বীকার করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়নি। দুর্নীতির ব্যাপারে সরকারপ্রধান আপোষহীন।
রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা সারাবিশ্বে একজন সৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। আর বাংলাদেশে তার জনপ্রিয়তার মূলে তার সততা ও পরিশ্রম। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবসময় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।’
সরকার পরিবর্তন নিয়ে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের উপায় দুটি- একটি হলো গণঅভ্যুত্থান, আরেকটি হলো নির্বাচন। গণঅভ্যুত্থান বিএনপির গলাবাজিতে ছিল, বাস্তবে ছিল না। গণআন্দোলনও তারা করতে পারেনি।
‘যে আন্দোলনে জনগণ সম্পৃক্ত নয় সে আন্দোলন কখনও সফল হয় না। জনগণ সম্পৃক্ত ছিল না বলেই তাদের আন্দোলন বার বার ব্যর্থ হয়েছে। তারা নির্বাচন বয়কট করার পরও ভোটার টার্নআউট ৪২ শতাংশের বেশি। তারা বয়কট করে নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি, জনগণের অংশগ্রহণও ঠেকাতে পারেনি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নিজেদের অপরাধকে ঢাকার জন্য অপপ্রচার করছে এবং তারা অপরাধীদের ক্ষমা করেছে। তাদের আমলে অপরাধীদের কোনো শাস্তি পেতে হয়নি।
‘আজ তারা বলে যে তারেক রহমানকে কিভাবে শাস্তি দিবেন? আরে শাস্তি তো তিনি পেয়ে গেছেন। দুদকের মামলায় নয় বছর কারাদণ্ড হয়েছে। সিঙ্গাপুরে পাচার করা কিছু টাকা বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছে।
‘অর্থ পাচারের মামলায় তারেক রহমানের সাত বছর সাজা ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। এখন শাস্তির বাস্তবায়নটা করতে হবে। শাস্তি কার্যকর করতে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং সে চেষ্টা অব্যাহত আছে। তার শাস্তি কার্যকর হতেই হবে।’
কাদের আরও বলেন, ‘এ দেশে হত্যা ও গুমের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়েছে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাতে। জিয়াউর রহমানের আমলে তিন হাজারের বেশি রাজনৈতিক কর্মীকে গুম-খুন করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগের। বিএনপি কি সেটা ভুলে গেছে? এদেশের মানুষ এখনও সেই হত্যা, গুমের রোমহর্ষক কাহিনী ভুলে যায়নি।’
প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলের ৬২ হাজার নেতাকর্মী কাদের আমলে কারাগারে ছিল? যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধে কারামুক্তি দিয়েছেন জিয়াউর রহমান। এর মধ্যে ৭০৩ জন দণ্ডিত আসামি। অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। এটা সত্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিনকে গুম করে খুন করেছে বিএনপি। এর বিচার কে করেছে?’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ব্যাপারে দুদক তদন্ত করে বের করছে। দুদক স্বাধীন। এই স্বাধীনতা শেখ হাসিনা দুদককে দিয়েছেন। দুদক সূত্র জানিয়েছে, বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে এবং আরও তদন্ত হবে।
‘তদন্ত হচ্ছে মানে মামলা হলে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। শেখ হাসিনার আমলে কোনো অপরাধী শাস্তি ছাড়া পার পাবে না। সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ যদি অপরাধী হন তার বিরুদ্ধেও তদন্ত করতে পারবে দুদক। অপরাধী হলে অপরাধের জন্য শাস্তি পেতেই হবে, তিনি যে-ই হোন না কেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা এখন কথায় কথায় সাবেক আইজিপির দুর্নীতির কথা বলেন। তাদের আমলে সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদার কী বিচার করেছে তারা? রফিকুল ইসলাম চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টার সঙ্গে জড়িত। এর বিচার কি বিএনপি করেছে?
‘এসপি কহিনুর- যার হাতে অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মী নির্যাতিত হয়েছে, অন্তঃসত্ত্বা নারী পর্যন্ত রাজপথে মিছিল করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তার নির্যাতন-দুর্নীতির কথা ঢাকা শহরের মানুষের মুখে মুখে। তার বিচার কি হয়েছে? তাদের আমলে যেসব নেতাকর্মী দুর্নীতি করেছে, হাওয়া ভবনের দুর্নীতি- এসবের বিচার কি তারা করেছে?
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এদেশে ৭৫-পরবর্তীকালে একমাত্র ক্ষমতাসীন রাজনীতিক যিনি অপরাধী নিজের দলের লোক হলেও তাকে ক্ষমা করেন না। এর প্রমাণ তিনি রেখেছেন। বুয়েটে আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছাত্রলীগের কর্মীদের কি ছাড় দেয়া হয়েছে? বিশ্বজিতের কথা সবার জানা আছে।’
উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ ভাঙা এবং টেকসই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাসের মুখে সব জায়গায় বাঁধ টিকে থাকবে সেটার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না।
‘যুক্তরাষ্ট্রের চারটি অঙ্গরাজ্যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। ইচ্ছা হলেই কি এটিকে রোখা যায়? জলবায়ু পরিবর্তন এর বড় কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড় এবং ঝড়ের গতির মাত্রাও বেড়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরশু (বৃহস্পতিবার) ঘূর্ণিঝড়কবলিত এলাকা পটুয়াখালী পরিদর্শনে যাবেন। সময় পেলে খুলনায়ও যেতে পারেন।’