বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১১ বছর পর এভারেস্ট জয় আরেক বাংলাদেশি বাবর আলীর

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৯ মে, ২০২৪ ১০:৫৬

বাবর আলীকে ট্যাগ করে ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার’ নামের সংগঠনের ফেসবুক পেজে দেয়া স্ট্যাটাসে লেখা হয়, ‘অবশেষে!! পৃথিবীর শীর্ষ এভারেস্ট ছুঁয়েছি আমরা!!! ১১ বছর প্রতীক্ষার পর আজ তৃতীয় মেরুতে উড়েছে লাল-সবুজ!!’

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেছেন চট্টগ্রামের বাবর আলী।

তার এ সাফল্যের মধ্য দিয়ে ১১ বছর পর ফের এভারেস্ট বিজয় হলো বাংলাদেশের।

স্থানীয় সময় রোববার সকাল সাড়ে আটটায় (বাংলাদেশের সময় পৌনে ৯টা) বাবর এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান বলে জানায় ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার’ নামের সংগঠন।

বাবর আলীকে ট্যাগ করে তাদের ফেসবুক পেজে দেয়া স্ট্যাটাসে লেখা হয়, ‘অবশেষে!! পৃথিবীর শীর্ষ এভারেস্ট ছুঁয়েছি আমরা!!! ১১ বছর প্রতীক্ষার পর আজ তৃতীয় মেরুতে উড়েছে লাল-সবুজ!!

‘ঠিক শুনছেন। আমাদের স্বপ্নসারথি বাবর আলী আজ সকাল স্থানীয় সময় ০৮:৩০ (বাংলাদেশের সময় ০৮:৪৫ -এ) আকাশ ছুঁয়েছে।’

পোস্টে আরও বলা হয়, ‘সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এবং লাখো শুভাকাঙ্ক্ষীদের দোয়ায় প্রকৃতিমাতা বাবরকে ক্ষণিকের জন্য স্থান দিয়েছেন নিজের চূড়ায়। খানিক আগে বেজ ক্যাম্প ম্যানেজার এবং আউটফিট মালিক আমাদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।’

বাবর এখন ক্যাম্প-৪-এ নামার পথে আছেন উল্লেখ করে পোস্টে বলা হয়, ‘ওই ডেথ জোনে যোগাযোগ সম্ভব নয়। তাই অভিযানের ছবি পেতে সময় লাগবে। আমরা ভীষণ আনন্দিত, কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না আমাদের মূল লক্ষ্য কিন্তু শুধু এভারেস্ট নয়, লোৎসেও। তাই দোয়াতে থাকুক বাবর আলী।’

ছবি: ফেসবুক থেকে নেয়া

এদিকে ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাবর আলীর এভারেস্ট জয়ের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, ‘পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর মাউন্ট এভারেস্টে প্রথম অভিযান পরিচালিত হয় আজ থেকে শতাধিক বছর আগে। ১৯২১ সালে মাউন্ট এভারেস্টে সাফল্য-ব্যর্থতার গল্পগাথার শুরু, তবে পৃথিবীর এই শীর্ষবিন্দুতে বাংলাদেশি পর্বতারোহীদের এভারেস্ট অভিযান হয়েছে আরও পরে একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে।

‘২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে চার বছরে পাঁচজন বাংলাদেশি ছয়বার মাউন্ট এভারেস্ট সামিট করেন, কিন্তু এরপরই এভারেস্ট অভিযানে নেমে আসে খরা। দীর্ঘ সময় ধরে কোনো বাংলাদেশি সফল অভিযান হয়নি পৃথিবীর তৃতীয় মেরুতে। আজ ১১ বছরের সেই খরা কাটিয়ে সকাল নেপালের স্থানীয় সময় সাড়ে আটটায় মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন বাবর আলী। আজ ভোরে বেজ ক্যাম্প টিমের বরাতে আমাদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান।’

বাবরের এভারেস্ট যাত্রা

ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ থেকে বাবর আলী নেপালের উদ্দেশে রওনা হন গত ১ এপ্রিল। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে তিন দিন পরই (৪ এপ্রিল) নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে তিনি উড়ে যান পৃথিবীর অন্যতম বিপজ্জনক বিমানবন্দর লুকলাতে। সেই লুকলা থেকে পথচলা শুরু করে ১০ এপ্রিল বাবর পৌঁছে যান এভারেস্টের বেজ ক্যাম্পে।

এভারেস্ট অভিযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো একাধিকবার উচ্চতায় ওঠানামা করে উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া, কিন্তু কয়েক দিন অপেক্ষার পরও নেপালের দায়িত্বরত দল পথ তৈরি করতে পারেনি। তাই বাবর বিকল্প বেছে নেন। তিনি ১৬ এপ্রিল সামিট করেন ২০ হাজার ৭৫ ফুট উচ্চতার লবুচে ইস্ট পর্বত।

ছবি: ফেসবুক থেকে নেয়া

পরে আবারও বেজ ক্যাম্পে ফিরে পর্বতের নিচ অংশের পথ খুলে গেলে ২৬ এপ্রিল বেজ ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করে ক্যাম্প-২ পর্যন্ত ঘুরে এসে শেষ করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার পর্ব। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ অপেক্ষা।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘শুভাকাঙ্ক্ষী আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশের কাছ থেকে পাওয়া গেল ১৯ থেকে ২১ এপ্রিল থাকবে চূড়ার পরিবেশ কিছুটা শান্ত। এরপরই ১৪ এপ্রিল মাঝরাতে বেজ ক্যাম্প থেকে শুরু হয় বাবরের স্বপ্নের পথে যাত্রা। প্রথম দিনেই সরাসরি উঠে আসে ক্যাম্প-২-এ, যার উচ্চতা ২১ হাজার ৩০০ ফুট। পরিকল্পনা অনুসারে সেখানে দুই রাত কাটিয়ে বাবর ১৮ মে উঠে আসেন ২৪ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতার ক্যাম্প-৩-এ এবং ১৯ মে আসেন ক্যাম্প-৪-এ।

‘২৬ হাজার ফুট উচ্চতার এ ক্যাম্পের ওপরের অংশকে বলা হয় ডেথ জোন। অবশেষে ১৮ মে মাঝ রাতে আবারও শুরু হয় বাবরের যাত্রা এবং ভোরের প্রথম কিরণে ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্ট শীর্ষে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশের পতাকা।’

বাবরের লক্ষ্যের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তবে অভিযান কিন্তু এখনও শেষ নয়! বাবরের আসল লক্ষ্য শুধু এভারেস্ট নয়, সাথে লাগোয়া পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত লোৎসেও। আজ ক্যাম্প-৪-এ নেমে মাঝরাতে আবারও শুরু করবেন দ্বিতীয় লক্ষ্যের পথে যাত্রা এবং সব অনুকূলে থাকলে ভোরে পৌঁছে যাবেন এর চূড়ায়।

‘উল্লেখ্য যে, এই লোৎসেতে ইতোপূর্বে কোনো বাংলাদেশি সামিট করেননি এবং কোনো বাংলাদেশি একই অভিযানে দুইটি আট হাজারী শৃঙ্গ চড়েননি। তাই লক্ষ্য পূরণ হলে বাবর আলী করবেন এই বিপজ্জনক খেলায় বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।’

নেপালের ‘স্নোয়ি হরাইজন’ নামক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অভিযানে এই সামিটে বাবরের সঙ্গে ছিলেন তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং পর্বতারোহণ গাইড বীর বাহাদুর তামাং।

ছবি: ফেসবুক থেকে নেয়া

বাবরের ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের পক্ষ থেকে প্রধান অভিযান সমন্বয়ক ফরহান জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাবর আলীর এই সাফল্য শুধু তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং এটি পুরো বাংলাদেশের জন্য এক গর্বের বিষয়। এটি আমাদের দেশের তরুণদের আরও বড় স্বপ্ন দেখার এবং সেগুলি পূরণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।

‘এই অভিযানের পেছনে ছিল অসংখ্য মানুষের অবদান এবং স্বপ্ন। আমরা তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।’

অধ্যাবসায়ের শুরু যখন থেকে

ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কাগজে-কলমে বাবর আলীর এই অভিযান আজ থেকে দেড় মাস আগে শুরু হলেও তার কঠিন অধ্যাবসায় শুরু হয়েছিল ১০ বছর আগে। ২০১৪ সালে পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স প্রতিষ্ঠার পর হতেই ক্লাব সতীর্থদের নিয়ে নেপাল এবং ভারতের বহু পর্বতে অভিযান করেছেন তিনি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি সামিট করেছেন নেপালের আমা দাবলাম পর্বত। পর্বতারোহণ তার নেশা হলেও সাইক্লিং, ম্যারাথন, স্কুবা ডাইভিংয়ের মতো অ্যাডভেঞ্চার অ্যাকটিভিটিতেও নিয়মিত জড়িত ছিলেন। অ্যাডভেঞ্চারের তাড়নায় হেঁটে ঘুরেছেন দেশের ৬৪ জেলা, সাইকেলে পাড়ি দিয়েছেন ভারতের কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীর পথ।

‘বান্দরবান থেকে হিমালয়, সুন্দরবন থেকে দক্ষিণ ভারত, যে জনপদেই তিনি গেছেন, সাক্ষী হয়েছেন অভূতপূর্ব কিছু মুহূর্তের। প্রকৃতির প্রতি তার এই ভালোবাসা এবং বিস্ময় প্রতিনিয়তই মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সেই সূত্র ধরেই অবশেষে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া থেকে পৃথিবী দেখার স্বপ্নও সার্থক করেছেন এই তরুণ পর্বতারোহী।’

ছবি: ফেসবুক থেকে নেয়া

কে এই বাবর আলী

নানাবিধ দুঃসাহসী কর্মকাণ্ডের কারণে মূলত পরিচিতি হলেও বাবর পেশায় মূলত চিকিৎসক। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বুড়িশ্চর এলাকার লেয়াকত আলী এবং লুৎফুন্নাহার বেগমের দ্বিতীয় সন্তান বাবর।

তিনি চট্টগ্রামের গভর্নমেন্ট মুসলিম হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে (চমেক) ভর্তি হন।

চমেকের ৫১তম ব্যাচের এ ছাত্র কিছুদিন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করলেও আগের অভিযানের সময় ছুটি না মেলাতে ত্যাগ করেন চাকরির মোহ।

ছবি: ফেসবুক থেকে নেয়া

অভিযানে খরচ কত

ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের ভাষ্য, বাবর আলীর এভারেস্ট অভিযানের মোট খরচ ৪৫ লাখ টাকা, যাতে মূল পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে ভিজ্যুয়াল নীটওয়্যার লিমিটেড। এ ছাড়া সহপৃষ্ঠপোষক ছিল এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ঢাকা ডাইভার্স ক্লাব, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ব্লু জে, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী, গিরি, ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স।

অভিযানের জন্য গণতহবিল সংগ্রহে অংশ নিয়েছেন দেশে-বিদেশে নানা সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠন এবং অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী। অভিযানের সার্বিক সমন্বয় করেছে বাবর আলীর নিজের ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স।

এভারেস্ট জয় করা বাংলাদেশিরা

বাবর আলীর আগে এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন আরও পাঁচ বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে মুসা ইব্রাহিম ২০১০ সালের ২৩ মে, এম এ মুহিত ২০১১ সালের ২১ মে এবং ২০১২ সালের ১৯ মে, নিশাত মজুমদার ২০১২ সালের ১৯ মে, ওয়াসফিয়া নাজরীন ২০১২ সালের ২৬ মে এবং খালেদ হোসাইন ওরফে সজল খালেদ ২০১৩ সালের ২০ মে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন।

সজল খালেদ সামিট শেষে নেমে আসার পথে মৃত্যুবরণ করেন।

এ বিভাগের আরো খবর