অনলাইন জুয়া ও হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে মুদ্রা (টাকা) পাচার হচ্ছে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। তার অনুপস্থিতিতে লিখিত উত্তর পড়ে শোনান অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।
স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে তিনি বলেন, ‘কিছু অসাধু চক্র অনলাইন জুয়া/বেটিং, গেমিং (অনলাইনে এক ধরনের জুয়া), ফরেক্স/ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং (ভার্চুয়াল মুদ্রা, ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন হয়), হুন্ডি ইত্যাদি অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে একদিকে দেশ থেকে মুদ্রা পাচার হচ্ছে, অন্যদিকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে দেশ। এতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
এম আবদুল লতিফের করা প্রশ্নের লিখিত উত্তরে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনলাইন জুয়া/বেটিং ও হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। অনলাইন জুয়া/বেটিং ও হুন্ডির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫৮৬টি ব্যক্তিগত এমএফএস (মোবাইলে আর্থিক সেবা) হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। ৫ হাজার ৭৬৬ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং হুন্ডি লেনদেনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৫ হাজার ২৯ জন এমএফএস এজেন্টের ব্যবসার অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে। ১০ হাজার ৬৬৬টি এমএফএস এজেন্ট হিসাবের লেনদেন ব্লক করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১ হাজার ৯৬টি ওয়েবসাইট, ১৮২টি অ্যাপ ও ১ হাজার ২টি সোশ্যাল মিডিয়া পেজ চিহ্নিত করে বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সরবরাহ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, জুয়া, অনলাইন জুয়া, ক্যাসিনো ইত্যাদির সংজ্ঞা ও এ ধরনের অপরাধের কঠোর শাস্তির বিধান সংযোজন করে ‘দ্য পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট ১৮৬৭’ সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য শাম্মী আহমেদের এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থ মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদসহ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত কৃষকের কোনো কৃষিঋণ মওকুফ করা হয়নি। এ-সংক্রান্ত কোনো পরিকল্পনা (ঋণ মওকুফ) আপাতত নেই। ব্যাংক আমানতকারীদের থেকে সংগৃহীত অর্থ কৃষকদের মাঝে কৃষিঋণ হিসেবে বিতরণ করে থাকে। আমানতকারীদের থেকে সংগ্রহ করা অর্থ সুদসহ ফেরত দিতে হয় বিধায় ব্যাংকের পক্ষে কৃষিঋণ মওকুফ করা সম্ভব হয় না।’
সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা এ মুহূর্তে সরকারের নেই।’
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুল কাদের আজাদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের জুলাই থেকে গত ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত স্থানীয় মুদ্রাবাজারে ৯ হাজার ১৩৯ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৯১৪ কোটি ডলার) বিক্রি করেছে।