বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবায় চরম ভোগান্তিতে চরবাসী

  • কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা   
  • ২৬ অক্টোবর, ২০২৫ ২১:৫৮

কুড়িগ্রাম জেলার বড় অংশজুড়ে রয়েছে চর এলাকা। চরাঞ্চল অধ্যুষিত এ জেলার স্বাস্থ্যসেবা পেতে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদী পার হয়ে চরবাসীদের যেতে হয় হাসপাতালে।

দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন এসব চরের অধিকাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। দরিদ্র এ জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিয়তই টিকে থাকতে হয় প্রকৃতির ভাঙা-গড়ার খেলায়। বন্যা ও নদীভাঙনের ফলে প্রতি বছরই এসব চরের অনেক পরিবার হয় গৃহহীন। বিনষ্ট হয় তাদের আরাধ্য ফসল। আবার ভূমি হারিয়ে অনেকেই হয় নিঃস্ব।

বন্যা-খরার সঙ্গে বাড়তি দুর্ভোগ যোগ করে অসুস্থতা। অথচ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এসব মানুষের ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নেওয়ারও ব্যবস্থা নেই বেশির ভাগ চরাঞ্চলে। হাতে গোনা কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও সেখানে মিলছে না প্রত্যাশিত সেবা। শিশু কিংবা বৃদ্ধরা অসুস্থ হলেও ভরসা করতে হয় গ্রাম্য কবিরাজের ওপর। বিচ্ছিন্ন এসব চরের বাসিন্দারা বলছেন, চরাঞ্চলগুলোতে ফার্মেসি না থাকায় পাওয়া যায় না সাধারণ রোগের কোনো ওষুধ। মৃত্যুর ঝুঁকি থাকলেও গর্ভবতী নারীদের নির্ভর করতে হয় স্থানীয় ধাত্রীদের ওপর। সড়ক বা যানবাহনের ব্যবস্থা না থাকায় গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে নিতে পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে।

২২৪৫ বর্গকিলোমিটার আয়তন ও ২৩ লাখ ২৯ হাজার জনসংখ্যার কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকা ও বুকজুড়ে জেগে রয়েছে ছোট-বড় ৪৬৯টি চর। তবে ২৬৯টি চরে মানুষের বসবাস। প্রায় সাড়ে ৮০০ বর্গকিলোমিটার এসব চরে বসবাস করছেন প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ। কয়েক বছর আগে চার শতাধিক চরাঞ্চলের মধ্যে মাত্র ৫০টি চরে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে সরকার। এসব ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া গেলেও বাকি চরগুলোতে সে সুযোগটুকুও মিলছে না। যেকোনো রোগের চিকিৎসা করাতে নদীপথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয় উপজেলা বা জেলা শহরের হাসপাতালে।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার কালির আলগা চরের বাসিন্দা হোসেন আলী তিনি ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য। তিনি জানান, ওই চরে প্রায় ৭০০ জন বসবাস করে। চরে স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ছিল নদীভাঙ্গনে সেটিও নেই। চরটি ভারতের সীমান্তঘেঁষা। চরের সঙ্গে জেলা শহরের যোগাযোগের জন্য প্রথমে পাড়ি দিতে হয় নৌপথ। প্রায় ২ ঘণ্টার নদীপথ পাড়ি দিলে যাত্রাপুর ঘাট। সেখান থেকে কিছুদূর হেঁটে গেলে পাওয়া যায় অটোরিকশা। এরপর আরও ৮ কিলোমিটার সড়কপথ পাড়ি দিলে জেলা শহর। পার্শ্ববর্তী অনেক চরেই কমিউনিটি ক্লিনিকও নেই।’

জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যিনন্দ ইউনিয়নের তিস্তা নদীর অববাহিকার চর বিদ্যানন্দ বাস করেন আব্দুল আজিজ। কয়েকদিন আগে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। চরে অন্তত ৫০০টি পরিবার বাস করলেও স্বাস্থ্যসেবা নেই বললেই চলে। পরে তার স্ত্রীকে বাঁশ দিয়ে তৈরি ভাড়ে করে প্রথমে নৌকা ঘাটে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে নদী পার হয়ে তারপর অটোরিকশায় করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। একই অবস্থা উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর, চিলমারী, ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলগুলোর।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের বাসিন্দা খোদেজা বেগম বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয় গর্ভবতী নারীদের। প্রসব ব্যথা উঠলে স্থানীয় ধাত্রীরাই একমাত্র ভরসা। তাতেও সন্তান প্রসব না হলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা নৌপথ পারি দিয়ে যেতে হয় শহরের হাসপাতালে।’

যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঝুনকার চরে স্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মো. মিজানুর রহমান জানান, ঝুনকার চরে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও পার্শ্ববর্তী চরগুলোতে নেই। কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার কল্যাণ সহকারী ও একজন কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডারের পদ রয়েছে। গর্ভবতী নারীদের প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা দেওয়া হলেও প্রসবের ব্যবস্থা নেই।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বলছে, নয়টি উপজেলায় ২৯৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে চরাঞ্চলে রয়েছে মাত্র ৫০টি। এর মধ্যে নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে ছয়টি ক্লিনিক। তবে জেলা সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষ যাতে চিকিৎসাসেবা পায়, সে জন্য কাজ করছি আমরা।’

এ বিভাগের আরো খবর