নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলায় ২০২২ সালের ক্লুলেস সুমি হত্যা মামলার জট খুলেছে। অবাধ্য মেয়েকে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তারই মা। এ বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন ওই নারী।
নেত্রকোণা জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. লুৎফুর রহমান জানান, ২০২২ সালের ২২ আগস্ট রাতে মৃত্যু হয় জেলার পূর্বধলা উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের দরুণ বৈরাটি গ্রামের মৃত এমএল মিয়ার মেয়ে ১৮ বছর বয়সী সুমি কাউছারের। মৃত্যুর কারণ হিসেবে জানা যায়, রাত সাড়ে তিনটার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তাদের বসত বাড়ির পূর্ব পাশে টয়লেটে যান সুমি। এ সময় তিনি চিৎকার করলে তার মা জোসনা বেগম দৌড়ে গিয়ে তাকে ঘরে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে ‘বুক জ্বলতাছে’ বলে সুমির চিৎকার করতে করতে এক পর্যায়ে মারা যান।
এ ঘটনায় পূর্বধলা থানায় পরের দিন অপমৃত্যু মামলা করা হয়। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় এসআই হাফিজুর রহমানের ওপর। পরবর্তীতে ময়ন তদন্তের রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভুক্তভোগীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
রিপোর্টের ভিত্তিতে এসআই হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ২০২৪ সালে ১ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে বিভিন্ন কৌশল এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেও কোনোভাবে সম্ভব হচ্ছিল না। ৫ মে পূর্বধলা থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম ভুক্তভোগীর মা জোসনা বেগমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি নিজেই সুমি কাউসারকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন।
কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, সুমি তার অবাধ্য হয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মারামারি, এমনকি ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুরও হয়। মায়ের নিষেধ না শুনে একটি ছেলের সঙ্গে তিনি কথা বলতেন। ঘটনার দিন গভীর রাতে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন সুমি। টের পেয়ে জোসনা বেগম রেগে গিয়ে তার সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। এক পর্যায়ে রাগের মাথায় গলায় ওড়ানা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তাকে।
পরবর্তীতে জোসনা বেগমকে আদালতে পাঠানো হলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।