বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতসহ উফশী চার ধানে নতুন সম্ভাবনা

  •    
  • ৬ মে, ২০২৪ ১৮:৫৫

শস্যভাণ্ডারখ্যাত নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার পাড়ইল গ্রামে পরীক্ষামূলক আবাদে বিঘাপ্রতি ধনের ফলন মিলেছে ৩০ মণ। সরু, জিংকসমৃদ্ধ, সুগন্ধি সর্বোপরি জীবনকাল কম হওয়ায় বঙ্গবন্ধু-১০০, ব্রি-১০২, ১০৪ ও ১০৫ চাষাবাদে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের।

শস্যভাণ্ডার-খ্যাত নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার পাড়ইল গ্রামে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সবুজ গাছের ডগায় দুলছে সোনালি ধান। এসব ধানের অধিকাংশই জিরাশাইল ও কাটারিভোগসহ অন্যান্য জাতের। আর এই দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের মাঝে ১৯০ বিঘা জমিতে ফলেছে ভিন্ন জাতের ধান।

স্থানীয় ৪০ জন কৃষক বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান বঙ্গবন্ধু-১০০, ব্রি-১০২, ১০৪ ও ১০৫ চাষাবাদ করেছে। ব্রি রাজশাহী অঞ্চল থেকে পার্টনার প্রকল্পের অর্থায়নে এসব ধান আবাদে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করা হয়েছে।

এসব ধান বিশেষ করে জিরাশাইল ধানের চেয়ে দুর্যোগ মোকাবেলা ও খরাসহিষ্ণু। জিরাশাইলের ফলন যেখানে বিঘাপ্রতি ২৪-২৬ মণ, সেখানে উন্নত জাতের এই ধানের ফলন বিঘাপ্রতি ২৬ থেকে ৩০ মণ। বিঘাতে ৩ থেকে ৪ মণ ফলন বেশি। চালও সরু, জিংকসমৃদ্ধ এবং সুগন্ধি চালের মতো। এর জীবনকাল বীজতলা থেকে শুরু করে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত প্রায় ১৪০ দিন। জীবনকাল কম হওয়ায় কৃষকদের মাঝে এই ধান চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে।

নিয়ামতপুরে ব্রি উদ্ভাবিত জাতের নমুনা শস্য কর্তন ও মাঠ দিবস পালন উপলক্ষে সোমবার সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ছবি: নিউজবাংলা

আমাদানিনির্ভরতা কমিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ ফসল পেতে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি। তারই অংশ হিসেবে নওগাঁর নিয়ামতপুরে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের নমুনা শস্য কর্তন ও মাঠ দিবস পালিত হয়েছে সোমবার।

নিয়ামতপুর উপজেলার পারইল গ্রামের মাঠে এদিন দুপুরে ব্রি রাজশাহী অঞ্চল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে শস্য কর্তন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর।

এছাড়া কৃষকদের মাঝে এই জাতের ধান চাষাবাদে আগ্রহ বাড়াতে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

রাজশাহী ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয় প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফজলুল ইসলাম হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে রাজশাহী অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মাহমুদুল ফারুক, নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ অন্যরা দেন।

আবাদে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ

জীবনকাল বীজতলা থেকে শুরু করে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত প্রায় ১৪০ দিন। চাল সরু হওয়ায় বাজারে এই ধানের দাম বেশি। আবার ফলনও বিঘাপ্রতি ৩ থেকে ৪ মণ বেশি। এসব কারণে স্থানীয় কৃষকরা ব্রি উদ্ভাবিত এই নতুন জাতের ধান আবাদে ব্যাপকভাবে আগ্রহী।

কৃষক আরিফুজ্জামান আরিফ বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আমরা জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ধানের আবাদ করতাম। তবে এ বছর ১০ বিঘা জমিতে নতুন জাতের ব্রি-১০২ ধান আবাদ করেছি। খরচ ও পরিচর্যা অন্যান্য জাতের ধানের মতোই। আশা করছি বিঘাপ্রতি ৩০ থেকে ৩৩ মণ ফলন পাবো।’

কৃষক ইফরেখারুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন জাতের ধান চাষাবাদে সাধারণত কৃষকদের অনীহা থাকে। কারণ কোনো কারণে ফলন বিপর্যয় হলে কৃষকের মাথায় হাত। তারপরও নতুন জাতের ধান আবাদ সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম। স্থানীয় অন্য কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অনেকেই এই নতুন জাতের ধান চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

‘শুরুতে আমরা কৃষকদের মাঝে সাড়া জাগাতে অল্প পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ করেছি। এখন অনেকেই এ জাতের ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এসব জাতের জীবনকাল কম হওয়ায় কৃষকদের মাঝে চাষাবাদে আগ্রহ বেড়েছে।’

কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমাদের এলাকায় নতুন জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। ফলন দেখছি ভাল হয়েছে। রোগবালাইয়ের আক্রমণও কম। আবার ঝড়-বাতাসে ধানগাছ হেলে পড়ছে না। কারণ বাতাসে হেলে পড়লে ফলন কম হয়। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে এই জাতের ধান আবাদে কোনো সমস্যা দেখছি না। পর্যাপ্ত পরিমাণ বীজ সরবরাহ করা গেলে আমাদের মতো অনেক কৃষক এই ধান চাষাবাদ করবে এবং লাভবান হতে পারবে।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. মাহমুদুল ফারুক বলেন, ‘উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষাবাদে বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে জমিতে চারা রোপণ ও পরিচর্যার বিষয়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আর কৃষকদের হাড়ভাড়া পরিশ্রমে মিলেছে কাঙ্খিত ফলন।

‘উত্তরাঞ্চলের মধ্যে নওগাঁ জেলা শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত। স্থানীয় কৃষকরা যেসব জিরাশাইল ধানের আবাদ করছেন তার বিকল্প হতে পারে এই চার জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ধানের তুলনায় এই জাতের ধানগাছের উচ্চতা বেশি এবং ঝড় ও বাতাসে হেলে পড়ে না। দুর্যোগ মোকাবেলা ও খরাসহিষ্ণু। আগামীতে এই জাত আরও সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করছি। গোখাদ্য হিসেবে এই ধানগাছের খড় কৃষকদের বাড়তি সুবিধা দেবে।’

ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘খাদ্য ঘাটতি মেটানোসহ আমদানিনির্ভরতা কমাতে কম সময়ে অধিক সফল উৎপাদন করতে ধানের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই ধান আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টির যোগান দিতে সক্ষম।’

তিনি বলেন, ‘উন্নত এই জাত স্থানীয় জিরাশাইল ধানের চেয়ে বিঘা প্রতি ৩-৪ মণ ফলন বেশি। বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ এবং ব্রি ধান ১০২ উচ্চ ফলনশীল ও জিংকসমৃদ্ধ। এছাড়া ব্রি-১০৪ সুগন্ধি ও বাসমতি আকারে। এটা পোলাও/বিরিয়ানির চাল হিসেবে রপ্তানি করা যাবে এবং স্থানীয় জিরাশাইলের চেয়ে বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যাবে।

আর ব্রি-১০৫ ডায়াবেটিক রাইস হিসেবে চাষাবাদ করে ডায়াবেটিক রোগীদের ভাত খাওয়ার সুযোগ তৈরির পাশাপাশি কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে।

এ বিভাগের আরো খবর