‘যে আগুন রোদ পড়ছে লোকের মাথা হিট হয় যাছে কেহ কেহ তো মরেও যাছে। এইখান আগুন রোদত যদি এতক্ষণ লাইনডাত দাঁড়ায় ভোট দিবা হয়, তাহিলে ভোটের লাইনডাতে লোকলা পড়িবে আর মরিবে। মুই ভোট দিবা যাবাও পারু নাও পারু।’
নিজের স্বাস্থ্য সুরুক্ষার কথা ভেবে কথাগুলো বলছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ ভোটার৷
সারা দেশ পুড়ছে দাবদাহে। হিট স্ট্রোক করে ঠাকুরগাঁওসহ অন্য এলাকাতেও মানুষের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। এই দাবদাহের মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের দুটি উপজেলা বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলায় আগামী ৮ মে ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
একাধিক ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এরই মধ্যে তীব্র রোদ আর গরমে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা জানতে চান উপজেলা নির্বাচনি এলাকার সচেতন ভোটাররা।
দাবদাহের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ওয়ার্ড- ৭, ৮ ও ৯ এ নারী সংরক্ষিত আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, তিনটি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৬৬৭ জন। এদিন ভোট দিয়েছেন ৩ হাজার ৩৭৪ জন ভোটার। যা মোট ভোটের ১৮.০৭ শতাংশ।
এদিন কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসাররা ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে তীব্র রোদ আর গরমকেই উল্লেখ করেছেন। এমন কাঠফাটা রোদে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে আগ্রহ হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা ও সাধারণ ভোটাররা।
ভোটার আব্দুর রশিদ বলেন, আমাদের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে৷ বলা হচ্ছে আমাদের ভোট অত্যন্ত মূল্যবান। কিন্তু কোনো প্রার্থীকে আমাদের জন্য কথা বলতে শুনলাম না। কোনো প্রার্থী দাবি তুলছে না যে, ভোটকেন্দ্রে এই দাবদাহে আমাদের স্বাস্থ্য সুরুক্ষা নিশ্চিৎ করতে হবে। এটা খুবই হতাশাজনক।
নারী ভোটার সাহেরা খাতুন বলেন, আমরা সারাদিন বাড়িতে কাজ করি। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যাই। মাঝে মাঝে শিতল হতে ফ্যানের নিচে যাই। কিন্তু ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে থাকতে হয়। এমন সময় ছায়া না পেলে ভোটারদের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ এর দায় কে নিবে? আমরা চাই ভোটকেন্দ্রে সামিয়ানার ব্যবস্থা করা হোক।
তেল গ্যাস ওখণিজ সম্পদ বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ঠাকুরগাঁওয়ের সদস্য সচিব মাহাবুব আলম রুবেল বলেন, দেশজুড়ে দাবদাহ চলছে এবং হিট এলার্ট ঘোষণা করা হয়েছে৷ এরই মধ্যে নির্বাচন হলে ভোটারদের প্রতি খুব দায়িত্বশীল হতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। ভোটকেন্দ্রে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবা, পানি ও সরবত সরবরাহ, ভোটার লাইনে সামিয়ানা ও ফ্যানের ব্যবস্থা সহ অন্যান্য সুবিধা। আর নির্বাচন কমিশন চাইলেই এসব করতে পারেন। এমন স্বাস্থ্য সুরুক্ষা নিশ্চিৎ না করা গেছে দাবদাহে ভোট পুড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে তথা ভোটার উপস্থিতি অত্যন্ত কম হবে এবং সঠিক জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে বিঘ্ন ঘটবে।
এদিকে ভোটের মাঠে এক প্রার্থী অন্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন আচরণবিধির নানা অভিযোগ তুলে রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবরে অভিযোগ দিলেও কোনো প্রার্থী এখন পর্যন্ত ভোটারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে কোনো আবেদন দেননি।
ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের জন্য কী কী জরুরি সেবা থাকছে এবং দাবদাহে ভোটকেন্দ্রে কী ধরনের প্রস্তুতি থাকবে ভোটার, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার জন্য- এমন প্রশ্নে এই দুই উপজেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান বলেন, দাবদাহ চলছে, ভোটারদের বিষয়টি আমরা চিন্তা করেছি। আমরা আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং বৃষ্টিও হবে। তারপরও আমরা আমাদের যাবতীয় প্রস্তুতির কথা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। পরবর্তী নির্দেশনা আসলে আমরা সেভাবে কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করবো। আশা করছি ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারবেন।
আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৮৬৩ জন এবং বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ১২ হাজার ৪৯৭ জন।