বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায় আর খাওয়ার অভাবে’

  • রাজশাহী প্রতিনিধি   
  • ১৬ আগস্ট, ২০২৫ ০০:২৯

রাজশাহীর পবা উপজেলায় একটি বাড়িতে দুই সন্তানসহ এক দম্পতির লাশ পাওয়া গেছে। পারিলা ইউনিয়নের বামনশিকড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। | বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) গভীর রাত থেকে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) ভোরের মধ্যে যেকোনো সময় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মতিহার থানার ওসি আব্দুল মালেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মৃত ৪ জনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহের পাশে পাওয়া একটি চিরকুটে লেখা আছে, ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।’

ঘটনা জানাজানি হয় শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে। তারপর দুপুরে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মৃত ব্যক্তিরা হলেন- ওই এলাকার বাসিন্দা মিনারুল ইসলাম (৩৫), স্ত্রী মনিরা বেগম (২৮) এবং তাদের ছেলে মাহিন (১৩) ও মেয়ে মিথিলা (২)। মাহিন খড়খড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। আর মিনারুল কৃষি কাজ করতেন।

পরিবারের সদস্য, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিনারুল আগে একসময় জুয়া খেলতেন। পরে ছেড়ে দেন। এ জন্য তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন। দেড় বছর আগে বাবা রুস্তম আলী ধানিজমি বিক্রি করে ঋণের একটা অংশ দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করেন। এরপরও তার দুই লাখ টাকা ঋণ ছিল। এই ঋণের জন্য প্রতি সপ্তাহে তাকে ২ হাজার ৭০০ টাকার বেশি কিস্তি পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু কিস্তি চালাতে পারছিলেন না মিনারুল। বাবাকে মিনারুল আর কিছু জমি বিক্রি করে পুরো টাকা পরিশোধ করতে বলেছিলেন। কিন্তু বাবা জমি বিক্রি করতে চাননি। এ নিয়ে মা–বাবার সঙ্গে মিনারুল কথা বলা বন্ধ করে দেন। এমনকি ছেলেমেয়েদেরও মিশতে দিতেন না।

চিঠিতে লেখা হয়, ‘আমি মিয়ারুল যেসব লেখা লেখব, সব আমার নিজের কথা। লিখে যাচ্ছি এই কারণে আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাব। এই মরার জন্য কারো দোষ নাই। কারণ লেখে না গেলে বাংলার পুলিশ কাকে না কাকে ফাসা টাকা খাবে। আমি মিনারুল প্রথমে আমার বোকে মেরেছি। তারপর আমার মাহিমকে মেরেছি। তারপর আমার মিথিলাকে মেরেছি। তারপর আমি নিজে গলাতে ফাঁস দিয়ে মরেছি। আমাদের ৪ জনের মরা মুখ যেন বাপের বড় ছেলে ও তার বো বাচ্চা না দেখে এবং বাপের বড় ছেলে যেন জানাজায় না যায়। আমাদের ৪ জনকে কাপন দিয়ে ঢাকতে আমার বাবা টাকা যেন না দেয়। এটা আমার কসম। ইতি মিনারুল, আসসালামু আলাইকুম।’

অপর একটি চিঠিতে লেখা রয়েছে, ‘আমি নিজ হাতে সবাকে মারলাম। এই কারণে যে আমি একা যদি মরে যাই,আমার বো, ছেলে, মেয়ে কার আশায় বেঁচে থাকবে। আমরা মরে গেল ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম সেই ভালো হলো। কারো কাছে কিছু চাইতে হবে না। আমার জন্য কাউকে মানুষের কাছে ছোট হতে হবে না। আমার বাবা আমার জন্য লোকের কাছে ছোট হয়েছে। আর হতে হবে না। চিরদিনের জন্য চলে গেলাম। আমি চাই সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।’

এই দুটি চিঠি লাশের পাশে পাওয়া গেছে।

এ ঘটনার পর সোয়া ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে যান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, মিনারুল স্ত্রী-সন্তানদের শ্বাস রোধ করে হত্যা করে নিজে ‘আত্মহত্যা’করেছেন। মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় মামলা হবে। তিনি বলেন, একটা চিরকুট পাওয়া গেছে। চিরকুটে তিনি ঋণগ্রস্ত ও আর্থিক অনটনের কথা লেখেছেন। সিআইডির ফরেনসিক টিম ও পিবিআই এসেছে। তারা ক্রাইম সিনের আলামতগুলো সংগ্রহ করবে। পরে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

স্থানীয় পারিলা ইউপির চেয়ারম্যান মো. সাহেদ আলী বলেন, মিনারুল ঋণগ্রস্ত ছিলেন। তাকে সপ্তাহে ২ হাজার ৭০০ টাকার বেশি কিস্তি দিতে হতো। তিন দিন আগে তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে চালসহ অন্যান্য জিনিসপত্র কিনেছেন। বর্ষাকালে কাজকর্ম ছিল না। এ জন্য চাপে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সকালে ঘটনা জানার পর দ্রুত এখানে আসি। পরে পুলিশকে জানাই। সে আগে জুয়া খেলত, পরে আর খেলেনি। ঋণের একটি টাকা মিনারুলের বাবা পরিশোধ করেছেন। এ জন্য পাঁচ কাটা জমিও বিক্রি করেছিলেন। আরেকটি ঋণ টানছিল মিনারুল।’

মিনারুলের বাবা রুস্তম আলী বলেন, ‘ছেলের কিছু ঋণ ছিল। সেটা খুব বেশি না। নতুন করে কোনো ঋণ আছে কি না, তা জানি না। আগে যেটা ঋণ করেছিল, সেটা ধানিজমি বিক্রি করে দিয়েছি। পরে আর কবে কবে ঋণ করেছিল, সেটা জানি না।’

মিনারুলের মা আঞ্জুয়ারা বলেন, ‘কোনো গন্ডগোল ছিল না। ভরণপোষণ আমিই দিই। ধারদেনা ছিল, মাটি (জমি) বিক্রি করে আমি দিয়েছি। আবার নতুন করে ধার করেছে। আজ সকালে মাছ কিনে আনলে ডাকাডাকি করি। পরে দেখি ছেলে ঝুলে আছে। নাতিকে আমিই মানুষ করেছি। আমার ওখানেই থাকত। কীভাবে কী হয়ে গেল।’ একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর